গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের ভোট-ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। নিজের অর্জনেই তিনি ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ বুধবার। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলায় তিনি ‘জননেত্রী’, ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’, ‘দেশরত্ন’, ‘রাষ্ট্রনায়ক’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে তার অর্জনের তালিকাটা এককথায় বিশাল। তার শাসনামলেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার। শেষ হয়েছে একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকনোমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশের মতো বড় বড় অর্জন এসেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরও অনেক অর্জনের মধ্যে রয়েছে- নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীতকরণ।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে শেখ হাসিনা জাতির জন্য আরও যেসব অর্জন নিয়ে এসেছেন তার মধ্যে রয়েছে- দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস, গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর ৪ মাসে উন্নীত হওয়া, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তি চালু।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬-০১ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাঙালি।
গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।
সেসবের মধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তি বৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য এ বছর জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’-এ ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা।