বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জেলে যাওয়ার সময় পিয়ন, ছাড়া পেয়ে ‘ডাক্তার’

  •    
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:০৫

সাঈদ হোসেনের মা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। মায়ের অনুরোধে সাঈদকে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিওনের চাকরি পাইয়ে দেন সেই চিকিৎসক। করোনার ভুয়া সনদ বিক্রির অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন ২০২০ সালের ২৫ মে। পরের বছর জামিনে মুক্তি পেয়ে ফেরেন বাড়িতে। সেখানে গিয়ে নামের সঙ্গে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করে শুরু করেন চিকিৎসা।

নওগাঁর সাঈদ হোসেন। ছিলেন ঢাকার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর অফিস সহায়ক (পিয়ন)। ২০২০ সালে দেশে করোনা মাহামারি শুরু হলে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে করোনার জাল সনদ বিক্রির দায়ে গ্রেপ্তার হয়ে যান কারাগারে। জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি নওগাঁর হোগল বাড়িতে ফিরে বনে গেছেন চিকিৎসক।

সব রোগের ‘চিকিৎসা জানা আছে’ সাঈদের। তাই কাউকে ফেরান না। নামের আগে পদবিও লিখছেন, ‘ডাক্তার’। রোগীদের ওষুধ লিখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়।

সেই ব্যবস্থাপত্রে নিজের নামের পাশে ডিগ্রি হিসেবে লিখেছেন, ‘ডিএমএফ’, নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার।

কোত্থেকে এই ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রি নিয়েছেন, এর মানে কী, কারা এই ডিগ্রি নেন, তার সনদ বা রোল-রেজিস্ট্রেশন নম্বর কী, তার কোনো কিছুই দেখাতে পারেননি সাঈদ।

এই ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের একটি ডিগ্রি। তবে যে কেউ এটি করতে পারেন এমন নয়। বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিয়ে এই কোর্সে ভর্তি হতে হয়।

চার বছরের এই ডিগ্রি শেষ করে সদনধারীদের কমিউনিটির ডাক্তার হিসেবে কাজ করতে হবে। তাদেরকে গ্রামে-গঞ্জে থাকতে হবে। শহরে থাকতে পারবেন না।

আবার হাইকোর্টের একটি রায় অনুযায়ী বিকল্প ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির পেশাধারীরা নামের সঙ্গে ডাক্তার লিখতে পারবেন না।

চিকিৎসকদের নিবন্ধন দেয় যে সংস্থা, সেই বিএমডিসির আইনেও নিবন্ধনভুক্ত মেডিক্যাল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।

তবে সাঈদ থাকেন শহরে। নওগাঁর সদর উপজেলার হোগল বাড়ি মোড়ে ভাই ভাই মেডিকেয়ার ফার্মেসিতে বসেন। রোগী দেখেন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।

পরিচিতজনদের কাছ থেকে তথ্য মিলেছে, সাঈদ হোসেনের মা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসকের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। মায়ের অনুরোধে সাঈদকে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিওনের চাকরি পাইয়ে দেন সেই চিকিৎসক।

করোনা শুরু হওয়ার পর সাঈদ জড়িয়ে যান করোনার ভুয়া সনদ তৈরিতে। বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। ২০২০ সালের ২৫ মে গ্রেপ্তার হন তিনি।

মামলাটির বিচার এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে ২০২১ সালে জামিনে মুক্তি পান তিনি। ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে একটি ফার্মেসি ও চেম্বার বসিয়ে শুরু করেন চিকিৎসা।

চিকিৎসা করাতে এসে প্রাণ যায় যায়

হোগল বাড়ি গ্রামের সাজু হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, মাস তিনেক আগে তার বাচ্চার সুন্নাতে খাৎনা করান সাঈদের কাছে। এরপর থেকে শিশুর রক্তপাত থামছিল না। অবস্থা বেগতিক দেখে রাত দেড়টার দিকে শিশুটিকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান তার বাবা।

সাজু বলেন, ‘আমার বাচ্চা সেদিন মরেই যাচ্ছিল। আল্লাহ পুনরায় হায়াত দিছে।’

সেদিনের ঘটনা গ্রামের মাতব্বরদের জানালে শালিসে সাঈদকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সাঈদ হোসেনের দেয়া ব্যবস্থাপত্র। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয় মোতাহার হোসেন নামের এক প্রবীণ বলেন, ‘সাঈদ একটা ভুয়া ডাক্তার। আমার একটা সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন থেকে তার কাছে চিকিৎসা করছি, কিন্তু রোগ সারেনা। উপায় না পেয়ে আমি শহরে ভালো ডাক্তার দেখাই। তারা আমাকে জানায় অসুখ অনুযায়ী ওষুধ ঠিক হয় নাই, রোগ সারবে কই থেকে?

‘পরে সেই ডাক্তার আমাকে এক শ টাকার ওষুধ দিছে, খেয়ে আমি বর্তমানে সুস্থ। এ তো রোগ-ই ধরতে পারে না, তাহলে কীসের ডাক্তার এই সাঈদ?’

চিকিৎসা নিতে আসা খাদেমুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রসাবের জ্বালাপোড়া, মাথা ঘোরানো ও চোখে ঝাপসা এই সমস্যা নিয়ে আসছি। এর আগেও চিকিৎসা নিয়েছি, কিন্তু কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বরং সমস্যা আরও বাড়ছে। ১০দিন পর আসতে বলছিল, তাই আবার এসেছি।’

আবুল কালাম আজাদ হোসেন নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘সে (সাঈদ) তো ঢাকায় একটা হাসপাতালের পিওন ছিল। এরপর শুনেছি করোনার জাল সনদ বিক্রি করার জন্য জেলে গেছে। এখন জেল থেকে এসে আবার দেখি ডাক্তার হয়ে গেছে। সে কখন ভর্তি হলো, আর কখন চাকরি করল, আর কীভাবেই বা ডাক্তার হলো বিষয়টা তদন্ত হওয়া দরকার।’

সাঈদ যা বলছেন

সাঈদ হোসেনের চেম্বারে গিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাভার প্রিন্স মেডিক্যাল ইনস্টিটিটিউট (ম্যাটস) থেকে আমি ১১-১২ সেশনে ডিএমএফ করেছি।’

এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

আপনার কোনো সনদ বা পাশ করার প্রমাণ আছে- এমন প্রশ্ন করা হলে জবাব এড়িয়ে চেম্বার ছেড়ে বাইরে চলে যান সাঈদ।

পরে আবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সামনে মাসে ২৩ তারিখ আমার মামলার হাজিরা আছে। সেটা শেষ করে এসে সকল তথ্য দেবো, আমার সকল কাগজপত্র আছে।’

এক পর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘এসব ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারব না। আপনাদের যা ইচ্ছে করতে পারেন।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নওগাঁর সিভিল সার্জন আবু হেনা মোহাম্মদ রায়হানুজ্জামান সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে জানলাম। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর