পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনার তৃতীয় দিনে আরও ১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ নিয়ে তিন দিনে পাওয়া গেল ৬৮ মরদেহ।
এ তথ্য নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, এখনও অন্তত ৪ জন নিখোঁজ আছে।
তিনি জানান, দিনাজপুর সদর থেকে ১ জন এবং বোদার বিভিন্ন জায়গা, দেবীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা থেকে ১৭টি মরদেহ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত উদ্ধার ৬৮ মরদেহ, ৪ জন নিখোঁজের তথ্য এবং ঘটনার পরপরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা ১৫ জন হিসাবে এখন পর্যন্ত নৌকাটিতে ৮৭ জন যাত্রী ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে থানা পুলিশ ও স্থানীয় উদ্ধারকারীরা জানায়, নৌকা উল্টে যাওয়ার পর অনেকেই সাঁতরে তীরে উঠে চলে যায়। এ কারণে স্থানীয় প্রশাসন ধারণা করছে, নৌকায় একশরও বেশি যাত্রী উঠেছিল।
এই দুর্ঘটনার জন্য অসচেতনভাবে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠাকেই দায়ী করছেন নৌকার মাঝি ডিপজল ও ঘাট ইজারাদার আব্দুল জব্বারসহ স্থানীয় প্রশাসন।
গত রোববার বেলা আড়াইটার দিকে আউলিয়া ঘাট থেকে বদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মানুষ হুড়োহুড়ি করে উঠতে থাকেন। সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় নৌকাটিতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ছিল। এ সময় অনেকেই নৌকাটিকে যেতে নিষেধ করছিলেন এবং কেউ কেউ ‘ডুবে যাবে’ বলেও চিৎকার করছিলেন। তবে সে চিৎকার আটকাতে পারেনি নৌকাটিকে।
বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। সেদিন দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ইঞ্জিনচালিত ওই নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিলেন।
বোদা থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন যে একজন চিৎকার করতেছে, সেই লোকটি আমাদের একজন এসআই। আমরা অনেক চেষ্টা করেও অতিরিক্ত লোক ওঠা বন্ধ করতে পারিনি। বেশি লোক ওঠায় এই দুর্ঘটনা।’
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি লোক ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নৌকাডুবির ঘটনায় পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বীপংকর রায়কে প্রধান করে একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’