রাজধানীর বনানী ও কুমিল্লায় বিএনপি নেতাদের ওপর হামলায় আওয়ামী লীগের ‘অতি উৎসাহী’ কোনো সদস্য দায়ী থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
সচিবালয়ে রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
কুমিল্লায় শনিবার বিএনপি নেতা বরকতুল্লা বুলুকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একই দিনে সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে বিএনপির এক কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
হামলায় ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির সাবেক মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কালকে (গতকাল শনিবার) কুমিল্লার ঘটনায় বিএনপির এক সিনিয়র নেতা আহত হয়েছেন। আমরা সেটা শুনেছি, ইতিমধ্যে তদন্তের ব্যবস্থা করেছি। কারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন সেটা দুইরকমভাবে শুনেছি। যেহেতু আমি শুনেছি, তাই তদন্তের আগে কিছু বলতে পারব না।
‘আমি একুটু বলতে পারি, যদি কেউ এ ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কিছু করে থাকেন, কিংবা কেউ যদি ঘটনাটা ঘটিয়ে থাকেন ইচ্ছা করে, তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বানানীর ঘটনাও কি অতি উৎসাহে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বনানীর যে ঘটনাটা, সেটা না জেনে আমি বলতে পারব না। সেটা আমি আগেই বলেছি। ঘটনাটির সমস্ত কিছু জেনে আর একদিন ব্রিফ করব আপনাদের। কেন এসব ঘটছে, কীভাবে ঘটছে না জেনে আপনাদের বলা উচিত হবে না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি মাঠে-ময়দানে হঠাৎ করেই দেখছেন। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, এর পাশাপাশি আমাদের দেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে। তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা রয়েছে। আমাদের সরকার সব সময় বলে, তারা গঠনতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করলে আমাদের বলার কিছু থাকবে না।
‘সরকার মনে করে সব রাজনৈতিক দলই সমানভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। কিন্তু সবাইকে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। যখন কেউ ভাঙচুর করবে, রাস্তা অবরোধ করবে, কিংবা জনমালের ক্ষতি করবে বা জ্বালাও পোড়াও করবে, তখনই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের যে অর্পিত দায়িত্ব, সেটা তারা পালন করবে। সেটা তারা করছে বলে বিশ্বাস করি।’
রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে কী নির্দেশনা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা (সহিংসতা) দুই দলের ক্ষেত্রেই হচ্ছে৷ আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কাজেই একদল মার খাচ্ছে, আর একদল ঘরে বসে আছে সেটা কিন্তু নয়। পাল্টাপাল্টি ঘটনা হচ্ছে, মুখোমুখি হচ্ছে।
‘কেন হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে? আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেছেন, সবারই রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। তবে যারা রাজনৈতিক দল তারা যদি নিয়ম মেনে রাজনীতি করে, রাজনৈতিক কর্মসূচি যদি পালন করে, আমাদের সেখানে কিছু বলার নেই। যার যার কর্মসূচি নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু সেটা বিধিসম্মত হতে হবে।’
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলেছি, সভা-সমিতি করলে আমাদের কিছু বলার নেই। যদি সভা সমিতি ছেড়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখনই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যায়। তার আগে কোনোখানেই নিরাপত্তা বাহিনী যাচ্ছে না।
‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার ওপর অর্পিত দায়িত্বটি পালন করছেন। যখন সংঘর্ষ লাগার আশঙ্কা থাকছে, সেখানে আগেই সতর্ক করছেন, ব্যবস্থা নিচ্ছেন এবং সংঘর্ষ লেগে গেলে উদ্ধার করছেন।’
কুমিল্লায় যে ঘটনাটি ঘটেছে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে ছুটে গেছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাত শুরু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের সময় রয়েছে অনেক। তবে এখানে কার কি উদ্দেশ্য এগুলোতো আমরা পর্যবেক্ষণ না করে বলতে পারব না। অনেকেরই অনেক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আমি সব সময় বলি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় জনগণের শক্তিকে বিশ্বাস করেন। কোনো ষড়যন্ত্র, কোনো মাসল, কোনো বন্দুকের নল এগুলো আমরা বিশ্বাস করি না।’
জনগণ ভোট দিলে আবারও ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ। না দিলে আসবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি সামনে নির্বাচন আসছে সে নির্বাচনে আবার যদি প্রধানমন্ত্রীকে জনগণ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন তাহলে তিনি আসবেন। এখানে কোন ষড়যন্ত্র করে, কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে বা কোন পেশিশক্তি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। তবে যারা এগুলো করবেন তাদের জন্য অশুভ সংবাদ হলো তারা যদি এগুলো থেকে বিরত না থাকেন তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সেটা তারা পালন করবে।’