প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত যাওয়ার আগে ‘হঠাৎ অসুস্থ’ হওয়ার পর সফর থেকে বাদ পড়ে যাওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এখন পুরোপুরি সুস্থ বলে জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ঠিক সাত দিন পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এই সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকছেন কি না- এমন প্রশ্নে জানালেন, তার যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগের দিনও মন্ত্রী জানিয়েছিলেন তিনি যাচ্ছেন। পরে দেখা যায় সফরসঙ্গী হিসেবে তার নাম নেই। এরপর তার অসুস্থতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাও নেন।
প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগের দিন বুধবার মন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, তিনি এবার সরকারপ্রধানের সঙ্গী হবেন নাকি ভারত সফরের মতোই বাদ পড়ছেন।
- আরও পড়ুন: ভারত সফর থেকে কেন বাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সব উপর আল্লাহর ইচ্ছা। ইনশাল্লাহ আমি ঠিক আছি। সফরে যাচ্ছি। সব ঠিক আছে। তারপরও সব ঠিক থাকার পরও তো না যেতে পারি। মারাও তো যেতে পারি!’
শারীরিক অবস্থা এখন কেমন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শতভাগ ফিট’। পুরোপুরি সুস্থ আছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সব উপর আল্লাহর ইচ্ছা। ইনশাল্লাহ আমি ঠিক আছি। সফরে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনার ভারত সফর থেকে বাদ পড়ার পেছনে তার সাম্প্রতিক কিছু উক্তি কারণ কি না, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘ওগুলো ভিত্তিহীন, বাড়তি কথা।’
মোমেন কেন আলোচিত
গত ১২ আগস্ট মন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝাতে গিয়ে সিলেটের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে; একটি পক্ষ প্যানিক ছড়ানোর জন্য এমন কথা বলে।’
- আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- আরও পড়ুন: ট্রু সেন্সে বেহেশত বলিনি, এটা ছিল কথার কথা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তুমুল সমালোচনা ও ট্রলের মধ্যে ১৪ আগস্ট সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি তো ট্রু সেন্সে (আক্ষরিক অর্থে) বেহেশত বলিনি। এটা ছিল কথার কথা। কিন্তু আপনারা তো সবাই মিলে আমারে খায়া ফেললেন।’
এ নিয়ে সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
তার এই বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই দেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
ঢাকায় জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘যিনি এ কথা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। এটি আমাদের সরকারেরও বক্তব্য না, দলেরও বক্তব্য না। এই বক্তব্যের কারণে ভারতও লজ্জা পাবে।’
‘কীভাবে আমরা এই কথা বলি! বন্ধু বন্ধু আছে। অহেতুক কথা বলে এটি নষ্ট করবেন না’- আরও বলেন বিস্মিত আওয়ামী লীগ নেতা।
- আরও পড়ুন: মোমেনের বক্তব্যে লজ্জা পাবে ভারতও: কাদের
এর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আবার কথা বলেন। গোপালগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি সাংবাদিকদেরকে তার আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে ভারতেরও মঙ্গল।
সেদিন তিনি বলেন, ‘আমি ভারত সরকারকে বললাম, আপনার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে শেখ হাসিনা থাকায় স্থিতিশীলতা এসেছে। এই স্থিতিশীলতা আসায় আমাদের দেশেরও মঙ্গল হচ্ছে, আপনার দেশেরও মঙ্গল হচ্ছে। আপনার দেশেও ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হচ্ছে। সুতরাং স্থিতিশীলতা সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট। রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা খুব দরকার। তাতে আপনার দেশেরও মঙ্গল হবে, আমাদের দেশেরও মঙ্গল হবে।’
মন্ত্রীর এসব বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতারা সরকারকে আক্রমণ করছেন এই বলে যে, মন্ত্রী সত্য কথা বলে দিয়েছেন। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগ ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় থাকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সরকারের জন্য বিব্রতকর বক্তব্য থামছিলই না। মিয়ানমারের গোলা বাংলাদেশ সীমান্তে পড়ার বিষয়ে শনিবার তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা বাংলাদেশে জঙ্গল এলাকায় পড়েছে। সেগুলো বিস্ফোরিত না হওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এটি গুড নিউজ।’