যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টা মামলায় খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোবহান মোল্লার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
মঙ্গলবার খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক আবদুস ছালাম খান এই আদেশ দেন।
সোবহান মোল্লা বর্তমানে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত আছেন।
২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সোবহান মোল্লার দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের এই মামলা করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম জানান, প্রথম স্ত্রীর তথ্য গোপন করে ২০২০ সালের ১২মে ফারজানা বিনতে ফাকের নামের এক কিশোরীকে বিয়ে করেন সোবহান। তখন তিনি খুলনা মহানগর পুলিশের সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন। বিয়ের পর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেন তিনি। স্ত্রীকে একাধিকবার মারধর করে তিনি হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এক পর্যায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ফারজানা। আদালত এই মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত নিয়ে দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত সোবহান মোল্লার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এর আগে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ফারজানা জানান, সোবহান মোল্লা সোনাডাঙ্গা থানায় এসআই থাকাকালে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০২০ সালের ১২ মে তাকে নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী অফিসে নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করেন।
এক পর্যায় ফারজানা জানতে পারেন, সোবহানের স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। তখন তিনি এমএম সিটি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সোবহানের প্রতারণার বিষয়টি তিনি ধরতে পারেননি। বিষয়টি জানাজানি হলে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
ফারজানা জানান, এসআই সোবহান মোল্লা তাকে কীটনাশক পানে আত্মহত্যায় প্ররোচনা করেন। এ কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ২০২০ সালের ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া তাদের বিয়ের প্রমাণ নষ্ট করতে সোবহান রেজিস্ট্রার দেখার অজুহাতে কাজী অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রারের ৬ নম্ব ভলিয়মের ১৪ নম্বর পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। প্রতিবাদ করলে নিকাহ রেজিস্ট্রারকে (কাজী) প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ বিষয়ে কাজীর সহকারী সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি। পরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন কাজী। থানার ওসির মধ্যস্থতায় ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর আবারও তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়।
ফারজানার অভিযোগ, বিয়ের পর তার বাবা-মা ৫ লাখ টাকার মালামাল দেন। এরপরও এসআই সোবহান ইন্সপেক্টর হিসেবে প্রমোশনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকা যৌতুক চান। মেয়ের সংসারে সুখের জন্য তার বাবা দুদফায় ১০ লাখ করে তাকে ২০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। এরপর আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। পরিবারের পক্ষে আর যৌতুক দেয়া সম্ভব না হওয়ায় শুরু হয় নির্যাতন।
তিনি আরও জানান, শিশুর দুধ কিনে দেয়ার কথা বলে তাকে সোনাডাঙ্গা থানায় ডেকে নিয়ে পিস্তল দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেন সোবহান । এতে তার মাথায় ১২টি সেলাই দেয়া হয়।
এসব অভিযোগে ফারজানা খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে ওই দিনই সোবাহান তাকে অকথ্য গালিগালাজের পর আবারও ১০ লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে হুমকি দেন।
এ ঘটনায় ফারজানা ২৭ ডিসেম্বর মহানগর হাকিম (আমলী সোনাডাঙ্গা) আদালতে মামলা করেন।