সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় ছয় বছর পর দেশে ফিরেছেন গৃহকর্মী নুর নাহার। একইসঙ্গে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার ছয় বছরের বকেয়া বেতন-ভাতার প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
মেয়ে নুর নাহারকে ফিরে পেয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া নিবাসী আবুল কালামের পরিবারে এখন বইছে আনন্দের বন্যা।
মানসিক ভারসাম্যহীন বেকার স্বামী ও একমাত্র কন্যাকে রেখে ভাগ্য ফেরানোর আশায় ২০১৬ সালে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যান নুর নাহার। কিন্তু সৌদি যাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
দীর্ঘ ছয় বছর অতিবাহিত হওয়ায় তাকে ফিরে পাওয়ার আশা একরকম ছেড়েই দেয় দেশে থাকা পরিবার। অপরদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে নুর নাহারও অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসের নজরে এলে নূর নাহারকে রিয়াদের হোতা বনি তামিম এলাকা থেকে উদ্ধার করে সেফ হোমে আশ্রয় দেয়া হয়। তার সুচিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়।
মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে তিনি বাংলাদেশে তার ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় পাসপোর্টে বর্ণিত ঠিকানা ও ছবি পাঠিয়ে রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় তার পরিবারের সঙ্গে দূতাবাসের শ্রম-কল্যাণ উইংয়ের যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
নুর নাহারের বাবা আবুল কালাম জানান, সৌদি আরবে যাওয়ার পর তার মেয়ে দীর্ঘ ছয় বছরে দেশে কোনো টাকা পাঠাননি। এ তথ্যের ভিত্তিতে দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইংয়ের পক্ষ থেকে নূর নাহারের সৌদি নিয়োগকর্তাকে খুঁজে বের করা হয়।
দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের অব্যাহত প্রচেষ্টায় সৌদি নিয়োগকর্তার কাছ থেকে নিয়োগচুক্তির শর্ত অনুযায়ী ছয় বছরের সমুদয় পাওনা বেতন-ভাতা বাবদ মোট ৬৮ হাজর ১৭ সৌদি রিয়াল আদায় করা সম্ভব হয়। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪৮ টাকা।
নূর নাহারের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সোনালী ব্যাংক প্রতিনিধির সহায়তায় তার নামে সংশ্লিষ্ট সোনালী ব্যাংকে একটি একাউন্ট খোলা হয়। ওই একাউন্টে তার সমুদয় পাওনা টাকা জমা করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর নুর নাহার বাংলাদেশে তার পাওনা অর্থ বুঝে পেয়েছেন।
দীর্ঘ ছয় বছর পর নূর নাহারকে ফিরে পেয়ে এবং তার কষ্টার্জিত সমুদয় পাওনা টাকা বুঝে পেয়ে পরিবারে এখন আনন্দের বন্যা। তার বাবা আবুল কালাম আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তিনি সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একইসঙ্গে দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।