ধানের ভরা মৌসুমে তরতর করে বাড়তে থাকা চালের বাজার অবশেষে নিম্নমুখী।
চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ দিনাজপুরে গত এক সপ্তাহে ৫০ কেজি ওজনের বস্তাপ্রতি দাম কমেছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, অর্থাৎ কেজিপ্রতি চার থেকে ছয় টাকা।
দেশের শীর্ষ ধান ও চাল উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। এই জেলার ধান ও চালের কারণে গড়ে উঠেছে দুই হাজারের মতো বিভিন্ন অটোরাইস মিল। এখানে চালের দাম কমার প্রভাব পড়ে সারা দেশেই।
দাম কমতে থাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে ক্রেতা কমেছে। দাম আরও কমতে পারে ভেবে তারা অপেক্ষার নীতি নিয়েছেন। এ কারণে দাম আরও কমে আসবে বলে আশা করছেন জেলার খাদ্য কর্মকর্তা।
চালের বাজার ঠান্ডা করতে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রেখেছে। চালের আমদানি শুল্ক দুই দফায় কমানো হয়েছে। সরকারও বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছে। পাশাপাশি ১৫ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ পরিবারকে আর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় স্বল্পমূল্যে আরও ৩০ লাখ পরিচারকে চাল দেয়া শুরু করেছে সরকার। পাশাপাশি আছে ওএমএস ও টিসিবিরি কার্যক্রম। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এসব কর্মসূচি। এতে বাজারে চালের চাহিদা অনেকটাই কমে আসছে আর পাশাপাশি কমছে দাম।
দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাহাদুর বাজারের এন. এ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার বিআর-২৮ জাতের ৫০ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকা পর্যন্ত।
এক সপ্তাহ আগে এই বাজারে একই চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯৫০ টাকা পর্যন্ত।
বিআর-২৯ চালের বর্তমান দর ২ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা; আগে ছিল ২ হাজার ৮৫০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা।
মোটা চালের মধ্যে ‘সুমন স্বর্ণা’র দাম নেমে এসেছে ২ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা; এক সপ্তাহ আগে ছিল ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকা।
‘গুটি স্বর্ণা’ চালের দাম নেমেছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়; এক সপ্তাহ আগে ছিল ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৪৫০ টাকা।
‘মিনিকেট’ চালের বর্তমান ৫০ কেজির বস্তা নেমেছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা; এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা।
সদর উপজেলার বাসিন্দা বাপ্পি হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাল কিনতে এসে শুনি বস্তাপ্রতি দেড় শ থেকে আড়াই শ টাকা কমেছে। এতে করে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষদের লোকের খুবই উপকার হয়েছে। আমি মনে করি দাম আরও কম হলে ভালো হয়।’
বিক্রেতারা অবশ্য দুশ্চিন্তায়, এর কারণ ক্রেতার অভাব। দুই ভাই রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জাবেদ হোসেন বলেন, ‘দাম কমছে। কিন্তু বাজারে ক্রেতা নাই। যখন দাম বেশি, তখন মানুষ বেশি কিনে নেয়। ফলে দাম বাড়ে। এখন মনে হচ্ছে মানুষ ভাতই খায় না।’
চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজগার আলী বলেন, ‘চালের ক্রেতা নেই। সরকার খোলা বাজারে ব্যাপক চাল সরবরাহের কারণে বাজারে চালের দাম কমে গেছে।’
রেশমা অটো রাইস মিলের পরিচালক রেজাউল ইসলামের ধারণা দাম আরও কমবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা তিন মাস চাল সরবরাহ করছি। আর ইরি মৌসুমে যখন ধান উঠল তখন বৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে কৃষক ধান শুকাতে পারেনি। আর সরকারকে চাল দেয়ার কারণে অন্যান্য চাল উৎপাদন করতে পারি নাই। ফলে চালের দামটা বেড়ে গিয়েছিল। তবে আমরা নতুন করে চাল উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছি। এতে মোকামে চাল সরবরাহ করা হবে। তখন দাম কিছুটা কমবে।’
বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, শুল্কের নিম্নগতি ও ডলারের দাম কমার কারণে চালের বাজার কমতে শুরু করেছে।
‘আগে যেখানে ডলার মূল্য ছিল ১০৮ টাকা, তা নেমে এসেছে ১০০ টাকার কাছাকাছি। আগামীতে পরিস্থিতি এমন থাকলে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।’
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, ‘ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও টিসিবির কার্যক্রমের ফলে বাজারে প্রকারভেদে ২ থেকে ৫ টাকা করে দাম কমেছে। আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম চলবে।’