সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বজ্রপাতে শ্যালো মেশিনের ছাউনি ঘরে আশ্রয় নেয়া আরও এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ওই কৃষক মারা যান বৃহস্পতিবার রাতে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও তিন কৃষক।
উল্লাপাড়ার মাটিকোড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চকুশি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজ এসব নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কৃষক রিয়াদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুপুরের পর সবাই ধানের জমিতে কাজ করতে যাই। বিকেলের দিকে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়। সবাই মাঠ থেকে দৌড়ে শ্যালো মেশিন রাখা ছাউনি ঘরের দিকে যায়।
‘আমরা কয়েকজন দৌড়ে প্রায় ৩০০ মিটার দক্ষিণে একটি ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিই। তখন আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। একটু পরই বিশাল শব্দে বজ্রপাত হলো। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার শোনা যায়।
‘আমরা বৃষ্টিতে ভিজেই শ্যালো মেশিনঘরের দিকে দৌড়ে যাই। দেখি মেশিনঘর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখি সবাই একজন আরেকজনের ওপর পড়ে আছে। আমরাও চিৎকার করতে থাকি। গ্রামের আরও মানুষ ছুটে আসে। সবাই মিলে এদের উদ্ধার করার সময় দেখি পাঁচজন মারা গেছে। বাকিদের ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
ভ্যানচালক সেলিম রেজা বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে এমন চিৎকার শুনে আমিও ছুটে আসি। এসে দেখি পাঁচজন মারা গেছে। বাকিরাও কথা বলে না। তাড়াতাড়ি করে আমার ভ্যানে চারজনকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হই। রাস্তার মধ্যে দুজন মারা যায়। আমি আর কিছু জানি না।’
উল্লাপাড়া ৩০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাবেয়া খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বজ্রপাতে আহতদের আমাদের এখানে নিয়ে আসে গ্রামের কয়েকজন মানুষ। আমরা চিকিৎসা শুরু করতেই একে একে তিনজন মারা যান। অন্যদের চিকিৎসা চলছে। তাদের সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব।’
নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান তৌহিদুল।
তারা হলেন মো. মোবাখর, মোন্নাফ হোসেন, শমসের আলী, আফছার হোসেন, শাহীন আলী, আব্দুল কুদ্দুস, শাহ আলম, রিতু খাতুন, জান্নাতি ও নদী খাতুন।
এর মধ্যে ১২ বছরের জান্নাতি ও ১০ বছরের নদী হলো রিতু খাতুনের মেয়ে। বাবা অসুস্থ থাকায় মায়ের সঙ্গে তারা মাঠে কাজ করতে গিয়েছিল বলে জানান চেয়ারম্যান। শ্যালো মেশিনঘরে গিয়ে বজ্রপাতে তারা আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পর এই মা-মেয়েদের মৃত্যু হয়।
চেয়ারম্যান আরও জানান, নিহতদের মধ্যে শাহীন ও আফছার ছেলে ও বাবা এবং শাহ আলম ও মোন্নাফ দুই ভাই।
উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৯৯৯-তে কল পেয়ে গিয়ে সাতজনের মরদেহ পাই। পরিবারের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে সন্ধ্যায়ই।’
নিহত প্রত্যেক কৃষকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসেন।