বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তিস্তা চুক্তির বিকল্প খুঁজছে দিল্লি

  •    
  • ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৯:২৬

ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, এবারও তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় মোদি প্রশাসন বিব্রত। ঘোষণা না থাকলেও চুক্তি সইয়ের সবকিছু করেছে মোদির কার্যালয় হায়দরাবাদ হাউস। ১২ বছর পর যৌথ নদী কমিশন বা জেআরসির বৈঠক হয়েছে, মমতাকে দিল্লিতে ডেকে নেয়া হয়েছে। এমনকি রাজনৈতিকভাবে চাপেও রাখা হয়েছে মমতাকে, কিন্তু ফল শূন্য।

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে না পারায় বিব্রত নয়াদিল্লির সাউথ ব্লক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় এই চুক্তি না করতে পেরে এখন বিকল্প খুঁজছে নয়াদিল্লি। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকের কথা ভেবে তিস্তা ঘিরে একটি বিকল্প জলাধার তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।

সেই জলাধারে বর্ষায় কৃষকদের জন্য সেচের পানি ধরে রাখবে ভারত। তখন হয়তো মমতার আর চুক্তিতে আপত্তি থাকবে না বলে মনে করছে হায়দরাবাদ হাউস।

ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, এবারও তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় মোদি প্রশাসন বিব্রত। ঘোষণা না থাকলেও চুক্তি সইয়ের সবকিছু করেছে মোদির কার্যালয় হায়দরাবাদ হাউস। ১২ বছর পর যৌথ নদী কমিশন বা জেআরসির বৈঠক হয়েছে, মমতাকে দিল্লিতে ডেকে নেয়া হয়েছে। এমনকি রাজনৈতিকভাবে চাপেও রাখা হয়েছে মমতাকে, কিন্তু ফল শূন্য।

তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে মমতার সঙ্গে একমত না হলেও ঢাকার সঙ্গে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখছে দিল্লি। কারণ ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তির আড়াই দশকেরও বেশি সময় পরে ফের কোনো নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে এমওইউতে সই করল নয়াদিল্লি ও ঢাকা।

২০২৬ সালে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন করতে হবে দুই দেশকে। ১৯৯৬ সালে যখন ৩০ বছরের জন্য গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি হয়েছিল, সে সময়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা।

তাই তো যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার তিনি জানালেন, মোদির জমানাতেই ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী’ ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতা হয়ে যাবে।

সাউথ ব্লকের সূত্র জানায়, তিন বছর আগেই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নজরদারিতে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছিল। এ বিষয়ে বিশেষভাবে নজরে রাখা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা। প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের স্বার্থে একটি আলাদা জলাধার তৈরি করতেও মোদি সরকার উদ্যোগী হবে।

নিউজবাংলাকে ওই সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার এবারের নয়াদিল্লি সফরের আগেই দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত ৫৪টি নদীর পানির ভাগাভাগি নিয়ে একটি সামগ্রিক বোঝাপড়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল ভারতের পক্ষ থেকে। কুশিয়ারা চুক্তি সেই পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে যৌথ নদী কমিশনের ধারাবাহিক বৈঠকের মাধ্যমে অন্য নদীগুলোর ক্ষেত্রেও সমঝোতা সম্ভব হবে বলে আশা করছে নয়াদিল্লি।

আগস্টের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে গঙ্গা, তিস্তা, মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার ও কুশিয়ারা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বন্যার সময়ের তথ্য বিনিময় ছাড়াও নদীতীরবর্তী এলাকাকে সুরক্ষিত রাখা এবং সাধারণ অববাহিকা অঞ্চলের সংরক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা হয় ওই বৈঠকে।

সে সময় ঢাকার পক্ষ থেকে আসাম ও সিলেটের মধ্যে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে সই করতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করা হয়। মঙ্গলবার সই হলো এমওইউ।

২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের সরকার তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তিতে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে সায় দেননি। তার আপত্তির কারণ ছিল, তিস্তার পানিচুক্তি হলে শুষ্ক মৌসুমে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে পানির অভাব দেখা দেবে। এরপর গত এক দশকে তিস্তাসহ কোনো নদীর পানিবণ্টন নিয়ে কোনো সমাধান মেলেনি। মঙ্গলবার মোদি-হাসিনা বৈঠকে কুশিয়ারা চুক্তিতে সেই বরফখণ্ড গলেছে বলে মনে করছে ভারত।

জ্বালানি আমদানিতে অগ্রগতি

সবকিছু ঠিকমতো এগোলে আগামী দিনে ভারত থেকে বাংলাদেশ জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারবে। এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনকে (আইওসি) স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মঙ্গলবারের একান্ত বৈঠক এবং দুই দেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছি। কেবল ডিজেল নয়, গ্যাসের কথাও বলা হয়েছে।

‘এখন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে নেবে।’

এদিকে বাংলাদেশের জ্বালানি আমদানির প্রস্তাব নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা মঙ্গলবার বিশেষ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বিভিন্ন সামগ্রী রপ্তানি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। জ্বালানি তেল ওই সব সামগ্রীর অন্যতম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের আইওসিকে চিহ্নিত করেছে। নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে।

‘আমদানি-রপ্তানির এই বিষয় নিয়ে যাবতীয় খুঁটিনাটি তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগবে। বিষয়টি নিয়ে আইওসি ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে।’

ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনছে। বাংলাদেশ সেই সুবিধা ভারত থেকে পেতে পারে কি না এবং এ-সংক্রান্ত আলোচনা দুই নেতার মধ্যে হয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব উল্লিখিত কথাগুলো বলেন।

রাশিয়ার তেল নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু না বলে তিনি সামগ্রিক পণ্য সরবরাহ প্রসঙ্গে আইওসিকে চিহ্নিত করার কথা বলেন।

তিনি বলেন, সামগ্রিক পণ্যের মধ্যে তেলও পড়ছে, তবে তা কত দিনে বাস্তবায়ন হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি।

বিনয় কোয়াত্রা বলেন, বাংলাদেশকে ভারত ৪ লাখ টন গম সরবরাহ করেছে। ভবিষ্যতে যা প্রয়োজন, তা সার্বিক পরিস্থিতির বিচারে ঠিক করা হবে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ইউপিআই পেমেন্ট (ভারতের ন্যাশনাল পেমেন্টস করপোরেশনের তৈরি করা রিয়েল-টাইম পেমেন্ট সিস্টেম) সম্ভাবনা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে, তবে এখনও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি।’

দুই দেশের মধ্যে ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে তিনি জানান। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা চলছে।

রোহিঙ্গা সংকট

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এবারও আলোচনা হয়েছে। সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিনয় কোয়াত্রা বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশ শঙ্কিত। এই সমস্যার সমাধানে যা কিছু করণীয় ভারত করছে; বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। ভবিষ্যতেও সহযোগিতার হাত বাড়ানো থাকবে। নিশ্চিত ও নিরুপদ্রব প্রত্যাবর্তনের কর্মসূচি ভারত সমর্থন করে।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকা সব সময় ইতিবাচক থেকেছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।’

নিত্যব্যবহার্য প্রয়োজনীয় পণ্যের (যার মধ্যে দ্রুত পচনশীল দ্রব্যও আছে) নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখার বিষয়ে ভারত যত্নবান বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব। এ নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ জন্য সাপ্লাই চেইন তৈরির ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এসব পণ্যের মধ্যে পচনশীল ও অপচনশীল, খাদ্য ও অন্য সব ধরনের পণ্য রয়েছে। এই সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টা চলছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি বা সেপা সই নিয়ে আলোচনা চলতি বছর শুরু হবে বলে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই জানিয়েছেন। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় ওই বোঝাপড়া চূড়ান্ত হবে।

‘সর্বোচ্চ প্রটোকল অনুযায়ী তাকে স্বাগত জানানো হয়েছে’

দিল্লি বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রীকে পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরোধীরা কী বলছেন, সেটা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছেন। সর্বোচ্চ প্রটোকল অনুযায়ী তাকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

‘সম্মানীয় অতিথির অমর্যাদা ভারত করে না। প্রতিপক্ষের সমালোচনার জবাব দেয়া সমীচীন নয়।’

অন্যদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে ভারত কীভাবে স্বাগত জানিয়েছে, তা ভারতের রাস্তাঘাট দেখলেই স্পষ্ট। এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর একক ছবি ও সাজসাজ রব দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর