নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা দিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তা নড়াইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মোহা. আমীনুল ইসলাম মঙ্গলবার ওই কলেজ পরিদর্শন করেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোর্শেদুল আলম তার সঙ্গে ছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা কলেজ পরিদর্শন শেষে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এসএম আনিসুল ইসলাম, একাডেমিক কাউন্সিলের আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক শেখ আকিদুল ইসলামসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে এক হিন্দু শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে কলেজে পুলিশের সামনেই শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে অপদস্ত করা হয়।
গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়, ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন স্বপন কুমার। ১৮ জুন এ নিয়ে কলেজে দিনভর উত্তেজনা চলে।
এরপর পুলিশ পাহারায় স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তৈরি হয় তীব্র ক্ষোভ।
এ ঘটনায় ১৭ জুলাই উচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য নোটিশ দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি ৮ সেপ্টেম্বর জবানবন্দি দেবেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনার ৯ দিন পর ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।
এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্ত চলছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এর আগে পৃথকভাবে এ ঘটনার তদন্ত করেছে। তদন্ত শেষে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আকতার হোসেনকে কারণ দশার্নোর নোটিশ দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
একইভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে শিক্ষক আকতার হোসেনের ভূমিকা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভালো নেই অধ্যক্ষ স্বপন কুমার
একের পর এক তদন্ত চলছেও ভালো নেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। ১৮ জুন কলেজে লাঞ্ছিত হয়ে পরিজন ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এক মাসেরও বেশি সময় পর ২৪ জুলাই জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে তাকে কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন থেকে কলেজটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।
তাকে কাছে পেয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। সবার আশ্বাসে সেই থেকে তিনি নিয়মিত কলেজ করছেন।
তবে এখনও নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে তাকে। এমনকি পুলিশের করা মামলা তুলে নিতে তাকে চাপ দেয়া হচ্ছে। এখনও তিনি পুলিশ পাহারায় কলেজে যাওয়া-আসা করেন। তার বসতবাড়ির দিকেও নজর রাখছে পুলিশ।
স্বপন কুমার বলেন, ‘স্বার্থান্বেষী মহল আবারও আমাকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। তাই নিজেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ মনে করছি না। যাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে লাঞ্ছিত হয়েছিলাম, তারা বেশ সক্রিয়।’
তবে নড়াইলের পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন বলেন, ‘অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ও তার পরিবারের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।’