চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইফকে গুলি করে পঙ্গু, হত্যাচেষ্টা ও চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলা তুলে নিতে আসামি ওসি কামরুজ্জামান তদবির করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম সাইফ নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ওসি কামরুজ্জামান রাজনৈতিক এক ‘বড় ভাইকে’ ফোন দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার অনুরোধ করেছেন। ওই ‘বড় ভাই’ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য বলে জানালেও তার নাম বলেননি সাইফুল।
তবে মামলা তুলে নিতে তদবিরের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি কামরুজ্জামান।
সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওসি কামরুজ্জামান আমার এক বড় ভাইকে ফোন দেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য, আমি নাম বলতে পারব না। গতকাল (সোমবার) বিকেল ৫টা-৬টার মধ্যে ফোন দিয়েছিলেন।
তার দাবি, ওই ‘বড় ভাই’ তাকে জানিয়েছেন, ‘ওসি ফোন দিয়ে বলেন, ভাই যা হওয়ার হয়েছে, ওপরের নির্দেশ ছিল। আর কিছু করার নাই আমাদের। সাইফুল তো আপনার কর্মী, তাকে একটু বলেন, যেন মামলাটা তুলে নেয়।’
সাইফুল বলেন, ‘আমি এখন ওই বড় ভাইয়ের রাজনীতি করি না। তাই ওনি বলেছেন যে, আমি তার রাজনীতি করিনি। ওনি বলতে পারবেন না। ওনাকে ফোন দেয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আমি জানতে পারছি।’
বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওসি কামরুজ্জামান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এরকম কারো সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। মামলা তদন্তাধীন আছে, এই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না।’
এক বছর আগে সাইফুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে ‘গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া, হত্যাচেষ্টা ও চাঁদা দাবির’ অভিযোগে অভিযোগে বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি কামরুজ্জামানসহ সাতজনের নামে রোবাবর চট্টগ্রামের দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা ছেনোয়ারা বেগম।
কামরুজ্জামান ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন ওই থানারই এসআই মেহের অসীম দাশ, এসআই সাইফুল ইসলাম, এসআই কে এম নাজিবুল ইসলাম তানভীর, এসআই নুর নবী, এএসআই রবিউল হোসেন এবং পুলিশের সোর্স মো. শাহজাহান ওরফে সোর্স আকাশ।
যা বলা হয়েছে এজাহারে
২০২১ সালের ১৬ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে জরুরি কথা আছে বলে ছাত্রদল নেতা সাইফুলকে অক্সিজেন এলাকার হোটেল জামানে ডাকেন পুলিশের সোর্স আকাশ।
সে সময় সাইফ পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দক্ষিণ পতেঙ্গায় ছেনোয়ারা হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউসে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলেন। আকাশের ফোন পেয়ে রাত ১০টার দিকে অক্সিজেন এলাকার হোটেল জামানে যান তিনি।
হোটেল জামানে পুলিশের সোর্স আকাশের সঙ্গে কথা বলার সময় ওসি কামরুজ্জামান, এসআই মেহের অসীম দাশ, সাইফুল, তানভীর, নুর নবী, এএসআই রবিউল ও অজ্ঞাত দুই পুলিশ সদস্য গিয়ে সাইফুলকে আটক করেন। এ সময় তার মোবাইল ও মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
কিছু দূর যাওয়ার পর ওসি অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ফোন করে বলেন, ‘সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেছি, তাকে আজকেই ফিনিস করব। তোমরা ইউনিফর্ম পরে জামান হোটেলে যাও এবং সেখানকার গত ২ ঘণ্টার সিসি ফুটেজ ডিলিট করে দাও। এটা এডিসি স্যারের নির্দেশ।’
পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে ২ ঘণ্টা ধরে ঘুরে রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় পৌঁছায় প্রাইভেট কারটি। সেখানে ওসি ও এসআই মেহের গাড়ি থেকে নেমে কিছু সময় কথা বলেন। এ সময় সোর্স আকাশ একটি থলে নিয়ে ওই জায়গায় আসেন।
পরে এসআই মেহের গাড়িতে উঠে সাইফুলকে বলে, ‘ওপর থেকে তোমাকে ক্রস ফায়ারের অর্ডার আছে। তুমি ৫ লাখ টাকা দিলে তোমাকে আমরা ছেড়ে দেব।’
এ সময় পরিবার এত টাকা দিতে পারবে না বলে জানান সাইফুল। তিনি তার অপরাধ কি জানতে চেয়ে আদালতে সোপর্দ করার অনুরোধ করেন পুলিশকে।
এরপর আসামিরা তার মুখ বেঁধে গাড়ি থেকে নামায়। এ সময় এসআই মেহের, এসআই তানভীর ও এএসআই সাইফুল তাকে উপুড় করে মাটিতে চেপে ধরেন। এরপর ওসি কামরুজ্জামান তার বাম পায়ের হাঁটুর ওপর-নিচে এক রাউন্ড গুলি করেন। এসআই মেহেরও একই স্থানে এক রাউন্ড গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে সাইফুল জ্ঞান হারান।
জ্ঞান ফিরে নিজেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবিষ্কার করেন সাইফুল। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার বাম পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়।
ড্রেসিংয়ের পর অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে অস্ত্র আইনে সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।