‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের মাইনাস করতেই দেশে এক-এগারো ঘটানো হয়েছিল’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে তারেক রহমানের ১৬তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর সময় একটা কথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, মাইনাস টু বলে একটা কথা খুব প্রচার হয়েছিল। মাইনাস টু তো হয়নি, হয়েছে মাইনাস ওয়ান।
‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে যারা বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাস করে, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের মাইনাস করতে হবে– এই ষড়যন্ত্রও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যুক্ত হয়েছে। কারণ তাহলে সুবিধা হবে তাদের পক্ষে এখানে একটা নিরঙ্কুশ প্রভাব বিস্তার করার।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারেক রহমান সাহেবকে ওই সময়ে যে বন্দি করা হয়েছিল, ওইটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। সামগ্রিকভাবে এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির যে স্বপ্ন রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে– সেই স্বপ্নকে বন্দি করা হয়েছিল। সেটা তারই চক্রান্তের অংশ। যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল, যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে ৯ বছর স্বৈরাচার এ দেশের জনগণের ওপরে নির্যাতন-অত্যাচার করেছে, যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে এক-এগারো ঘটেছে, তারেক রহমান সাহেবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আমাদের এখানে বসে আছেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘লক্ষ্য ছিল এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা যারা বলে, যারা নিজের পায়ের ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং যারা বাংলাদেশকে সেভাবে দাঁড় করাতে চায় তাদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে। যে সমস্ত জনপ্রিয় নেতা জনগণকে সংগঠিত করতে পারে, যাদের কথায় জনগণ একত্রিত হয় তাদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল।'
বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৬তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
২০০৭ সালে এক-এগারোর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ওই বছরের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে যৌথবাহিনী গ্রেপ্তার করে এবং ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান সপরিবারে। বিএনপি প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করে আসছে।
তারেক রহমানের সাংগঠনিক দক্ষতার প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০০৬ সালের আগে থেকে তিনি যে তৃণমূলে সংগঠনের সম্মেলনগুলো করছিলেন, ওই সম্মেলনগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি বিএনপিকে একেবারে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি বিএনপির নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন।
‘তার একটা অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা আছে। এই কয়েক বছরে আমরা যেটা দেখলাম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর থেকে অতি দ্রুত তিনি গোটা সংগঠনকে একটা কাঠামোর মধ্যে আনার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। অঙ্গসংগঠনগুলো গোছাচ্ছেন, বিএনপিকে গোছাচ্ছেন। এখানেই হয়েছে কাল। যেহেতু বিএনপি আবার জেগে উঠছে, বিএনপি আবার ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠছে– সুতরাং তাকে আবার দমিয়ে ফেলতে হবে, তাকে আবার ফেলে দিতে হবে– এটাই হচ্ছে তাদের (সরকার) লক্ষ্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তেল-ডাল-লবণের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা যখন আন্দোলন শুরু করেছি, সেই সময়ে ওরা (সরকার) আঘাত হানতে শুরু করেছে। ওরা চেষ্টা করছে এই আন্দোলনটাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে এবং তারা আবারও আগের মতো আগুন সন্ত্রাস, ওমুক সন্ত্রাস দিয়ে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করতে। তথ্যমন্ত্রী গতকাল বলেই ফেলেছেন যে আমরা বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র নিয়ে বহির্বিশ্বে যাব।
‘বহির্বিশ্ব এখন আর ওদের সেই প্রোপাগান্ডা মানছে না। কারণ পুলিশের আইজি বেনজীর আহমদ ও র্যাবের ওপর (যুক্তরাষ্ট্রের) বিধিনিধেধ দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে, এখানে তাদের যে প্রচারণা সেই প্রচারণাগুলো সঠিক নয়। সে জন্য আমাদের সব পদক্ষেপ খুব সতর্কভাবে নিতে হবে। আমরা যেন নতুন কোনো চক্রান্তের মধ্যে না পড়ি। আমরা যদি আবার সুযোগ করে দিই, আমাদের দমন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এবার কোনোমতেই পরাজিত হব না। কারণ আমরা গতকালও বলেছি, আমরাও বলছি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও বলেছেন, আমাদের এবার বিজয় লাভ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। নুরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন প্রধানের আত্মত্যাগ কোনোমতেই বৃথা যেতে দেয়া হবে না।'
দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।
সংগঠনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা শাম্মী আখতার, শ্যামা ওবায়েদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মোরতাজুল করীম বাদরু, মোস্তাফিজুর রহমান, ফজলুর রহমান খোকন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।