মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৩০ টাকা কেজি দরের চালের জন্য কার্ড নবায়ন ও ডেটাবেজ তৈরির নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নে একজন নারী সদস্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। একাধিক উপকারভোগী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেও এই জনপ্রতিনিধি অবশ্য তা অস্বীকার করছেন। তার দাবি, নাম তালিকাভুক্ত করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল বলে উপকারভোগীরাই কিছু অর্থ তাকে দিয়েছেন।
এই ইউনিয়নের ৬৪৪টি পরিবারকে ওএমএসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নারী সদস্য হালিমা বেগম উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা। জানিয়েছেন, কার্ডের নাম পরিবর্তনের জন্য নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের উপকারভোগী আন্না বেগম বলেন, ‘হালিমা মেম্বার আমাগো ন্যায্য মূল্যের কার্ড কইরা দিব কইয়া ১ হাজার কইরা টাকা নিছে।’
৮ নম্বর ওয়ার্ডের উপকারভোগী শিল্পী বেগমও একই কথা বলেন। তিনি জানান, টাকা নেয়ার পর তাদের সন্ধ্যাবেলা পরিষদে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় কম্পিউটারে নাম তোলার জন্য। তাদের সারা রাত বসিয়ে রেখে ভোর ৪টার দিকে নাম এন্ট্রির কাজ শেষ হয়।
‘আমরা তিন-চাইর শ মানুষ সারা রাত পরিষদে বইস্যা আছিলাম’- বলেন শিল্পী।
তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই নারী ইউপি সদস্য হালিমা বেগম বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে চেয়ে কোনো টাকা নিই নাই। কম্পিউটারের কাজ করতে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় উপকারভোগীরাই আমাদের কিছু টাকা দিয়েছিল।’
রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব গোলাম ফারুক বলেন, ‘সরকারিভাবে উপকারভোগীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের ফি নেয়ার নিয়ম নেই। যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে তাদের থেকে অর্থ আদায় করে থাকে- এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এই অভিযোগ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘কারও কাছ থেকে চেয়ে টাকা নেয়া হয়নি। তারা নিজেরাই দিয়ে গেছে।’
এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পরিষদে না আসাসহ তদারকির অভাবের অভিযোগও আছে। তিনি সপ্তাহে এক দিনের বেশি পরিষদে আসেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এমন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এর থেকে বেশি আর কী সময় দিব জনগণকে?’
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফুল আলম তানভীর বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। এই কর্মসূচির তালিকা করতে গিয়ে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম ও কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে, তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘এ বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হবে, তার বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’