কুমিল্লায় রুকনদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল বক্তব্যে জোট ত্যাগের পেছনে পুরো দায় বিএনপিকে দিয়েছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।
তার দাবি, এই জোটকে অকার্যকর করে রেখেছিল প্রধান দল বিএনপি। বারবার দেনদরবার করেও তাদেরকে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়ানো যায়নি।
সেই সঙ্গে বিএনপি শরিয়া আইনে বিশ্বাস করে না বলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে হতাশ হওয়ার কথা বলেন জামায়াত নেতা। প্রশ্ন তোলেন বিএনপির ক্ষমতায় থাকার শেষ দিন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের প্রসঙ্গ। সেদিনই এই জোট কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
শনিবার কুমিল্লার রুকনদের উদ্দেশে ভার্চুয়ালি এই বক্তব্যে শফিকুর জানান, বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত দলটির সঙ্গে আলোচনা করেই নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে জোটে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে তাদের দল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য জোট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে কিছু স্বীকার করতে চান না। আবার তিনি অস্বীকার করেছেন, এমনও নয়। বলেছেন, সময় এলে সবকিছু বলা যাবে।
জামায়াতের মুখপাত্র ও প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের বক্তব্যও একই। তার দাবি, তাদের আমিরের বক্তব্য আনুষ্ঠানিক নয়। আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বিজ্ঞপ্তি আকারেই আসবে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির ভূমিকায় অসন্তোষ
জামায়াতের আমির একেবারে শুরুতেই বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। আপনারা ছিলাম শুনে হয়তো ভাবছেন কী হয়েছে এখন। হ্যাঁ, হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই জোট দেশের জন্য উপকারী একটা জোট ছিল। ৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এবং সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছে। তার পরে আর ফিরে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বহু চিন্তা করে দেখেছি, এর পর থেকে এই জোট বাংলাদেশের জন্য আর উপকারী জোট নয়।’
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সে সময়ের বিএনপি সরকার। সে সময় সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের এই সরকারের প্রধান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক থাকায় তাকে মেনে না নিয়ে আন্দোলনে ছিল আওয়ামী লীগ ও তার জোটের শরিকরা।
এর মধ্যে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
সেদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের কর্মসূচি ছিল মুক্তাঙ্গন, গুলিস্তান ও পল্টন মোড় ঘিরে। বিএনপির কর্মসূচি ছিল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। আর জামায়াতের অবস্থান ছিল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে।
বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের লগি-বৈঠার পিটুনিতে মারা যায় জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন। সেদিন জামায়াত কর্মীরা মুহুর্মুহু গুলি করে কোনো রকমে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পারলেও এই মৃত্যু তাদেরকে বিএনপির ওপর অসন্তুষ্ট করে।
২০০৬ সালে পল্টনে লগি বৈঠা হাতে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন প্রাণহানি হয়। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পায়নি জামায়াত
এই সংঘর্ষ চলাকালেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। জামায়াতের সে সময়ের আমির মতিউর রহমান নিজামী গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই তাকে বারবার ফোন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মীদের পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু দিনভর পুলিশের অবস্থান ছিল নামকাওয়াস্তে। আর বাহিনীটির সদস্যরা বরং আওয়ামী লীগ কর্মীদের কাছেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু বাধা দিচ্ছিলেন না।
জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের প্রাণহানির পর সন্ধ্যায় মোতায়েন হয় সে সময়ের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর।
ততক্ষণে সেদিনের সংঘর্ষের পর সে সময়ের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলের প্রাধান্যের বিষয়টি উঠে আসে। এর কয়েক মাস পর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জারি হয় জরুরি অবস্থা। ওই মাসের ২২ জানুয়ারি হওয়ার কথা ছিল নবম সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপির ক্ষমতায় আসা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
কিন্তু সেটি হয়নি। জরুরি অবস্থা জারির প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের শেষে যে ভোট হয়, তাতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে বলতে গেলে উড়িয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর কয়েক বছরে জামায়াতের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দলটির পাঁচ শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা ফাঁসিতে ঝুলেছেন।
বিচার চলাকালে মারা গেছেন গোলাম আযম, আবদুস সুবহান বন্দি অবস্থায় মারা গেছেন। আর আরেক শীর্ষ নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা নিয়ে বন্দি।
এই দণ্ড কার্যকর রাজনীতিতে জামায়াতকে ঘিরে তৈরি হওয়া মিথ ভেঙে দিয়েছে। জামায়াত তার সমর্থকদের মধ্যে এই বিশ্বাস তৈরি করেছিল যে, কেউ তাদের নেতাদেরকে ফাঁসি দিতে পারবে না। এই চেষ্টা করা হলে আরব দেশগুলো বাংলাদেশের শ্রমিকদের ফেরত পাঠাবে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আগের দিন থেকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরুর হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু পরে দেখা গেল, জামায়াত আসলে কিছুই করতে পারেনি। এখন এমনকি দলীয় কার্যালয়গুলোও বন্ধ।
জোট নিয়ে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা
জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছে, বিশেষ করে প্রধান দল এই জোটকে কার্যকর করার তাদের চিন্তা নাই। তাদের যদি চিন্তা না থাকে, তাহলে তা হবে না।
‘এই বিষয়টা এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট, দিবালোকের মতো পরিষ্কার এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে এটা স্বীকার করেছে। …বছরের পর বছর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না।’
কুমিল্লার রুকন সম্মেলনে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকার পেছনে তিনটি কারণের কথা তুলে ধরেছেন
শফিকুর বলেন, ‘একটা জোটের সাথে কি কেয়ামত পর্যন্ত থাকব?... কোনো অ্যালায়েন্স আপনারা করবেন না, বাস্তবতাও নাই, পারবেনও না।’
বিএনপি ও জামায়াত আলাদা থাকলেও যোগাযোগ থাকবে বলে জানিয়ে দেন শফিকুল। বিএনপি যে তাদের দাবিতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের চেষ্টা করছে, তাতে জামায়াতের সায় থাকবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, ‘এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর ওপর ভর করে পথ চলা। তবে হ্যাঁ জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ।’
শরিয়া আইন নিয়ে বিএনপির অবস্থানে ভেঙেছে হৃদয়
বছরের পর বছর ধরে দিয়ে আসা স্লোগান ‘আল্লাহর আইন চান, সৎলোকের শাসন চাই’ জামায়াত বলে না ২০০৮ সাল থেকে।
ওই বছর নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে আল্লাহর আইনের কথা তাদের গঠনতন্ত্র থেকে তুলে দিলেও শরিয়া আইনই তাদের রাজনীতির প্রধান বিষয়।
দলটির আশা ছিল, বিএনপিও এ ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হবে। কিন্তু মির্জা ফখরুল এ নিয়ে যে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছন, তাতে হৃদয় ভেঙেছে জামায়াতের।
শফিকুর বলেন, ‘(জোটের) প্রধান দলের নেতা তো বলেই ফেলেছেন, আমরা শরিয়া আইন সমর্থন করি না।’
বিএনপি শরিয়াহ আইনে বিশ্বাস করে না বলে গত নির্বাচনের আগে একটি ভারতীয় দৈনিককে বলেছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ভোটের আগে আগে ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফখরুল বলেন, ‘আমরা জামায়াতের ব্যাপারে প্রশ্নের সম্মুখীন হই। বিএনপি কিন্তু জামায়াত নয়। বিএনপি শরিয়া আইনে বিশ্বাস করে না। বিএনপি মৌলবাদেও বিশ্বাস করে না। জামায়াতের ব্যাপারে আমাদের কোনো মোহ নেই।’
এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে সবাই চেষ্টা করার কথাও বলেন শফিকুর। বলেন, ‘যদি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সে তওফিক দান করেন, তাহলে আগামী দিনগুলোতে আমাদেরকে অনেক বড় প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করার জন্য।’
‘দোয়া করেন, এ সকল ত্যাগ যেন আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করেন। যে দেশটা কোরআনের আইনে পরিচালিত হবে।’
আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয়: জামায়াত
সেই রুকন সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও জামায়াত আমিরের জোট ছাড়ার বক্তব্যের বিষয়ে কিছু বলতে চান না কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘এটা জাতীয় ইস্যু। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দই কথা বলবেন। আমরা না।’
জামায়াতের আমিরের এই বক্তব্যের ভিডিও অনলাইনে ভেসে বেড়ালেও দলটির মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দও স্বীকার করতে চান না জোট ভাঙার বিষয়টি।
এক প্রশ্নে দলটির প্রচার সম্পাদক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা অফিশিয়াল বক্তব্য না। বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করে থাকে।‘
দলের রুকন সম্মেলনে আমিরের বক্তব্য যদি আনুষ্ঠানিক না হয়, তাহলে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য কবে আসবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের আমির তো শত শত বক্তব্য দেন। ব্যক্তি ও অফিশিয়াল বক্তব্য এক নয়। এ রকম যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে অফিশিয়ালি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সময়মতো জানানোর কথা বলেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা সময়মতো জানাব। এ ব্যাপারে আমি কোনো কমেন্ট করব না।’
দুই দলের সম্পর্কের নানা সমীকরণ
জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটের আলোচনা হয়েছিল ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই। জামায়াত নেতা মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ে উল্লেখ আছে, তারা সে সময় ১০০টি আসন চেয়েছিল বিএনপির কাছে। কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ায় জোট আর হয়নি। পরে অঘোষিতভাবে ৩৫টি আসনে জামায়াতকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিনিময়ে তারাও দেশের বাকি আসনগুলোতে বিএনপির হয়ে কাজ করেছে।
১৯৯৬ সালে বিএনপি ও জামায়াত পুরোপুরি আলাদা নির্বাচন করে। তখন ভরাডুবি হয় জামায়াতের। তারা জেতে মাত্র তিনটি আসনে। এরপর বিএনপি ও জামায়াত দুই পক্ষই একে অপরের গুরুত্ব বুঝতে পারে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৯৯ সালে জোটবদ্ধ হয় জামায়াত ও বিএনপি। সঙ্গে ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং আজিজুল হকের ইসলামী ঐক্যজোট।
প্রথমে এরশাদ ও পরে আজিজুল হক জোট ছেড়ে দেন। তবে সমালোচনার মধ্যেও জামায়াতকে বিএনপি কখনও ছাড়তে রাজি হয়নি।
দুই বছর পর যে জাতীয় নির্বাচন হয়, তাতে এই জোটের ভূমিধস জয়ের পেছনে দুই দলের ভোট যোগ হওয়াই ছিল প্রধান কারণ।
তবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবার জামায়াত সঙ্গ বিএনপির জন্য নেতিবাচক হিসেবেই ধরা দেয়। ওই নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি বড় হয়ে ওঠার পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবি হয়। স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে সঙ্গী করে ভোটে নেমে দীর্ঘদিনের শক্তিশালী অবস্থানেও বড় ব্যবধানে হেরে যায় বিএনপি।
ওই নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে ১০টি কমিটি গঠন করা হয় বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনার জন্য। এর মধ্যে ৯টি কমিটিই জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতাকে দায়ী করে, যা ছিল বিএনপির তৃণমূল নেতাদের অভিমত।
নির্বাচনের পর বিএনপির তরুণ নেতারাও প্রকাশ্যেই দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দাবি তোলেন জামায়াত ছাড়ার।
১৯৯৯ সালে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি যখন জোট করে, সে সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও তাতে যোগ দেন। পরে এরশাদ সরে গেলে দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়
তবে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে এবং নির্বাচনের পর সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে জামায়াতকে নিয়েই যোগ দেয় বিএনপি। আর ব্যাপক সহিংসতার পর বিএনপি নেতারা নানাভাবে জামায়াতকে দায় দেন।
ওই নির্বাচনের পর একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট কৌশলগত। সময় এলেই তিনি জামায়াতকে ত্যাগ করবেন।
এসব ঘটনায় আবার জামায়াত মনঃক্ষুণ্ন হয় বিএনপির প্রতি। যদিও তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য আসেনি।
মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচারের সময় বিএনপির কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতাও পায়নি জামায়াত। এ নিয়েও খেদ আছে দলের নেতাদের মধ্যে।
বিএনপি চারদলীয় জোট সম্প্রসারণ করে পরে ২০-দলীয় জোট গড়েছে। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি জোট তারা করে গত সংসদ নির্বাচনের আগে।
এর মধ্যে বিএনপির জামায়াত ছাড়ার প্রসঙ্গ নানা সময়ই এসেছে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সময় এলে তারা জামায়াতকে ছেড়ে দেবেন।
এর মধ্যে ২০২১ সালের শুরুতে বিএনপি এই জোট ত্যাগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে আর গণমাধ্যমকে কিছু জানায়নি।