জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ চা শ্রমিকদের পক্ষে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। কিন্তু চা শ্রমিকদের সঙ্গে নয় কেন? শ্রমিকদের কথা কে শুনবে? প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের কথা শুনতে কেন রাজি নন?'
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা বারবার বলছেন এই প্রধানমন্ত্রীকেই তারা বিভিন্ন সময় ভোট দিয়েছেন। সেই ভোটেরও গুরুত্ব প্রধানমন্ত্রীর কাছে নেই।’
শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে সংহতি জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
চা শ্রমিকদের সঙ্গে সারা দেশ ব্যানারে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সমর্থনে সর্বজনের এই সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ১২০ টাকাকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে এটি আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য। ৩০০ টাকা মজুরির দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করা কঠিন। ৩০০ টাকা মজুরি দিতে হবে এটা বলতেও আমার সংকোচ হয়। কারণ বর্তমান বাংলাদেশে ৩০০ টাকা মজুরি দাবি হিসেবে উঠতে পারে এটাই অবিশ্বাস্য।
এই অধ্যাপক বলেন, ‘১২০ টাকা যে মজুরি হিসেবে থাকতে পারে সেটা এই আন্দোলন না থাকলে অনেকেই জানতেন না। অনেক শ্রমজীবী মানুষও জানেন না চা শ্রমিকরা ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন।
‘মালিকদের কথা শুনলে মনে হয় তাদের মতো খারাপ অবস্থা আর কারও নেই। উৎপাদনের জন্য যে উপকরণ প্রয়োজন হয় সেই উপকরণের দাম বাড়লে মালিকরা কোনো প্রতিবাদ করেন না। ‘উপকরণের মূল্য পরিশোধ করেন। কিন্তু মানুষের শ্রমশক্তির দাম পরিশোধে তাদের আপত্তি। এইখানে এসে তাদের কান্নাকাটি শুরু হয়।’
আনু মোহাম্মদ বলেন, এই আন্দোলনের ফলে চা শ্রমিকরা তাদের দাসত্বের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে ঢাকা শহরে এবং সব আন্দোলনের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করে সজোরে কথা বলতে পারবেন এবং অন্যরা যখন তাদের সঙ্গে সে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন তখনই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।
সংহতি সমাবেশে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চা শ্রমিকরা যখন মজুরি বৃদ্ধির কথা বলে তখন সরকারের উচিত একটা মজুরি বোর্ড গঠন করা। বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের জন্য আজও পর্যন্ত মজুরি বোর্ড গঠিত হয়নি।’
জহিরুল বলেন, 'আজকে তিন সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। তারা তিন সপ্তাহ মজুরি পায়নি। তাদের কারও পকেটে টাকা নেই এখন। শ্রমিকরা নতজানু হবে এই ভরসায় মালিকপক্ষ এই অবস্থা তৈরি করেছে।'
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ুম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোরশেদা প্রমুখ।
এ সময় সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায়, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সোহেল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈই, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীলসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।