রোহিঙ্গা ইস্যুকে জিইয়ে রেখে সরকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের পাশাপাশি তাদের নিয়ে ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। বলেছেন, সংকট সমাধানে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশ সরকার। এতে করে মহাসংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ।
নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চাপ প্রয়োগে ব্যর্থতার অভিযোগও করেন বিএনপি নেতা। তিনি এমনও বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার নেই দেশে। এ কারণে বিশ্বদরবারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমর্থন আদায় করা যায়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত শুরু থেকেই এ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একার নয়, এটি বৈশ্বিক সংকট। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকট যে একটি বৈশ্বিক সংকট, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সে বিষয়ে যথাযথভাবে উদ্বুদ্ধ বা কনভিনসড করতে পারেনি। বিশ্বের অন্যান্য মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সাড়া দেয় বা তৎপর হয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তারা সেভাবে এগিয়ে আসেনি। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ সরকারের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই না।’
রোহিঙ্গা সমস্যা একদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং সামাজিকভাবে জীবন-জীবিকায় চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা। বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা, নারী পাচার এবং নানাবিধ অসামাজিক ও আইনবিরোধী কার্যকলাপে সৃষ্ট অশান্ত ও অস্থির পরিস্থিতি, মাদক চোরাচালান ও মাদক পাচারে রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়া, রোহিঙ্গাদের অন্তর্দ্বন্দ্বে রোহিঙ্গা নেতা হত্যা ইত্যাদি বিষয় চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করে চলেছে। প্রতি বছর গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু যুক্ত হচ্ছে। সে হিসাবে গত চার বছরে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং এ সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
‘অনেকে ভালো ভবিষ্যতের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে যেমন সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অন্যদিকে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগণের আবাসন ও খাদ্যের জোগান দেয়া, স্যানিটারি ব্যবস্থাসহ পরিচ্ছন্নতা বিধান, স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদান, ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গা সন্তানদের শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষাব্যবস্থা, বিনোদন, জীবনাচার ইত্যাদি বিষয় অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনানির্ভর এক মহাকর্মযজ্ঞ। বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সংকটকালে ইতোমধ্যে ১৭ কোটি মানুষের ভারে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের এ অতিরিক্ত বোঝা বহন করা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়েছে’- বলেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের জন্য ‘নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন' নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানিয়ে দেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আর এই প্রত্যাবর্তনকে শুধু কাগুজে চুক্তিতে বন্দি না রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তির কার্যকর প্রয়োগের পথে এগোতে হবে।
‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং বিশ্বশক্তিগুলোর স্ব স্ব ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে হবে। কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উপলব্ধি করাতে হবে। কিন্তু তার আগে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
‘আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায়, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই। কোনো ধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের পাতানো খেলার অপকৌশল হিসেবে নয়। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারের জোরালো ভূমিকা দেখা যায়নি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।