বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইভিএমে সন্দেহ, ভয় সরকারবিরোধীদের

  •    
  • ২৫ আগস্ট, ২০২২ ১৪:০৯

‘ইভিএমে আমরা ভয় পাই। নির্বাচন কমিশন আগে যা করেছে, তা দেখে তো ভয় পাওয়ারই কথা। আগের ইভিএমের ফলাফলে আমরা সন্দিহান। ইভিএম নিয়ে দেশে আরও স্টাডি করা দরকার। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমেও ভোট নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অতীতের মতোই এটির ঘোর বিরোধিতা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এটিকে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন বলেই মনে করছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

এ সিদ্ধান্তে নির্বাচনকে সরকারের তল্পিবাহক বলে উল্লেখ করছে সরকারবিরোধী দলগুলো। তাদের কেউ কেউ এমনটাও বলছে, সরকারের পক্ষে কারচুপি করতেই নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নির্বাচন কমিশন বলছে, কত আসনে ইভিএমে ভোট হবে, সেটি তারা চূড়ান্ত না করলেও সংখ্যাটি দেড় শর বেশি হবে না।

এর আগে ইভিএমে ভোট করা নিয়ে গত জুনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মত নেয় নির্বাচন কমিশন। ইভিএম নিয়ে কমিশনের ওই সংলাপে দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এটির বিরোধিতা করেছে।

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিও এই পদ্ধতির ঘোর বিরোধিতা করেছে এবার। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো এটির বিরোধিতা করে ওই সংলাপেই অংশ নেয়নি। যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে অর্ধেক এই যন্ত্র ব্যবহারের কথা বলেছে, বাকি অর্ধেক দল বলেছে, এই যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত হবে না।

এসব আলোচনা শেষে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন বলছে, ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কঠিন। তারা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে, যদি নতুন মেশিন কেনা না হয়, তাহলে ১০০ আসনে ভোট করাই সমস্যা সংকুল হয়ে যায়। ৮০টির মতো আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা তাদের আছে। দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট নিতে হলে কমিশনকে নতুন মেশিন কিনতে হবে।

যা বলছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো

নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বুধবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘সরকার ৩০০ আসনে ইভিএম চেয়েছিল। কমিশন সমঝোতার মাধ্যমে অর্ধেক আসনে সরকারের সঙ্গে রফা করেছে। এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত, নির্বাচন কমিশন সরকারের হয়েই কাজ করছে।’

বিএনপি মহাসচিব এও বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই, মূল দাবি, সরকার পরিবর্তন না হলে কোনো কমিশনের অধীনেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সরকারের সঙ্গে ইসির রফা (সমঝোতা) হয়েছে, যার মাধ্যমে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। ইভিএমে ভোটের মাধ্যমে ইসি সরকারের ইচ্ছার চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটাবে। এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। বিএনপিও এসব ইভিএম মানে না।’

এ বিষয়ে মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘সাধারণ মানুষ মনে করছে, করচুপি করতেই ইভিএমে নির্বাচন করতে চায় ক্ষমতাসীনরা।’

তবে ইভিএমে ভোট হলে নির্বাচনে যাবেন কি না জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটার বিষয়ে নির্বাচনের আগে দল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা আগে ভাগেই আমরা বলতে পারছি না।’

বুথে ইভিএমে ভোট দেয়া হচ্ছে। ফাইল ছবি

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি ও নতুন জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আ স ম রব দেড় শ আসনে ইভিএম ব্যবহারকে সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার নীল নকশা বলে মনে করেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত ১২তম সংসদীয় নির্বাচনকে প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে ফেলবে। অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনাকে সুদূরপরাহত করবে‌। এটা গণতন্ত্র, নির্বাচন ও ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর নীল নকশার অংশ।’

আবদুর রব মনে করেন, ইভিএম বাংলাদেশের নির্বাচনি সংস্কৃতি এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগিতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ভোটাররা ইভিএম ব্যবহারে যেমন স্বচ্ছন্দ নয়, তেমনি ইভিএম ত্রুটিমুক্ত নয়, ইভিএমের ওপর জনগণের ন্যূনতম আস্থা নেই। ইভিএম জনগণের কাছে ‘জালিয়াতির বাক্স’ হিসেবে পরিচিত।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে কেউ চায় না যে ইভিএমে নির্বাচন হোক। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখন আওয়ামী লীগের তল্পি বহন করা শুরু করে দিয়েছে।’

এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইভিএমে আমরা ভয় পাই। নির্বাচন কমিশন আগে যা করেছে, তা দেখে তো ভয় পাওয়ারই কথা। আগের ইভিএমের ফলাফলে আমরা সন্দিহান। ইভিএম নিয়ে দেশে আরও স্টাডি করা দরকার। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘মূল বিষয় হলো আওয়ামী লীগের মতলবই খারাপ। তারা যে পদ্ধতিতেই থাকুক, সেটা বিষয় না, তারা ভোট চুরি করবেই।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘প্রথমত, বাংলাদেশে সুষ্ঠু একটা নির্বাচন করার জন্যে এখন ইভিএমটা প্রধান কোনো এজেন্ডা না। প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থার একটা আমূল সংস্কার এবং নির্বাচনকালীন কোনো ধরনের সরকার ক্ষমতায় থাকবে সেটি। আমাদের কাছে মনে হয়, আমরা দেখলাম নির্বাচন কমিশন এই আলোচনাকে বাইপাস করে এমন আলোচনা আমাদের সামনে আনতে চায়, যাতে করে তার কোনো ভালো নির্বাচনের ইচ্ছা আছে বলে মনে হয় না।

‘দ্বিতীয়ত বক্তব্য হচ্ছে, এই নির্বাচন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ইভিএম নিয়ে বাংলাদেশে অধিকাংশ দল, আমাদের পার্টিও পরিষ্কারভাবে লিখিতভাবে জানিয়েছি, ইভিএমের যে জটিলতাগুলো আছে এবং নির্বাচনকালে যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে, যারা এগুলো মনিটর করবে, তাতে এইটা নিয়ে মেনিপুলেশনের পর্যাপ্ত সুযোগ আছে। সুতরাং এখন ইভিএমের কোনো প্রয়োজন নেই। নির্বাচন কমিশন যদি অন্ততপক্ষে গণতান্ত্রিক হতো, তাহলে অধিকাংশ দলের মতামত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতো যে এবারের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না।

‘আমি ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করলাম, তারা ইভিএম ব্যবহারের কথাটা বলে প্রকারান্তরে জনগণের তাদের প্রতি যে আস্থাহীনতা রয়েছে, তা আরও বাড়িয়ে দিল।’

বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যাদের সঙ্গেই আলোচনা করেছে, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেছে, তারা ইভিএমের বিরুদ্ধে। তাহলে এই আলোচনার মূল্যটা কী থাকল? সরকারি দল যেমন করে চায়, সেভাবে নির্বাচন সাজানোর পথে কি নির্বাচন কমিশন এগোচ্ছে?

‘আমরা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চেয়েছিলাম। মেশিন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু মেকানিজমটা তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

এ বিভাগের আরো খবর