রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে এক ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন।
হাটহাজারী থানায় বুধবার রাতে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আবদুর রাজ্জাক। রাতেই তাকে পুলিশে দেয়া হয়।
অভিযুক্ত জোবায়ের হোসেন সোহাগ বিশ্বদ্যিালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের একজন কর্মী।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই ছাত্রের নামে মামলা হয়েছে।’
এর আগে বুধবার সকাল ১১টায় স্মরণ চত্বর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের সিন্ডিকেটের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ও চক্রাকারে বাস চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেন কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী। সেখানে অভিযুক্ত জোবায়ের হোসেন সোহাগও ছিলেন।
পরে বিশ্বদ্যিালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি এসে মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রক্টর অফিসে আলোচনা করতে নিয়ে যান। তাদের সঙ্গে সহকারী প্রক্টররা কথা বলেন।
জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য ও সন্দেহভাজন আচরণের কারণে সোহাগকে সেখান থেক আলাদা করে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর (সোহাগ) ডায়েরিতে নাশকতার পরিকল্পনা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মোবাইলেও এমন অনেক কিছু পাওয়া গেছে যা রাষ্ট্রবিরোধী। এগুলো দেখতে আমাদের অনেক সময় লেগে যায়।’
‘হাটহাজারী থানা প্রশাসন আমাদের জানায়, এগুলো রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ, বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে মামলা করতে পারে।’
প্রক্টর বলেন, সোহাগের ডায়েরিতে ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনা লেখা ছিল। সেখানে ‘রুখসাত পরিকল্পনা’ টাইটেল দিয়ে ট্রেনে নাশকতার বিস্তারিত লেখা ছিল। এ ছাড়া, গ্যালারিতে বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি ও রাষ্ট্রবিরোধী অনেক কিছু তথ্যবহুল ছবি পাওয়া গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থী হলে এমন পরিকল্পনা লেখা থাকার কথা না।
‘ওই ছাত্র শিবিরের পদধারী বলে নিজেকে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ শাখার শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া শিবিরের টেলিগ্রাম গ্রুপেও যুক্ত তিনি।’
নাশকতার তথ্য প্রমাণ পাওয়াতেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান।
এ দিকে অভিযুক্ত জোবায়ের হোসেন সোহাগকে নিজেদের সদস্য বলে দাবি করে ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় শাখার সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক নাসরিন আক্তার বলেন, ‘যৌক্তিক আন্দোলনকে দমনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজটি করেছে। সোহাগ আমাদের সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। সে সবধরনের যৌক্তিক আন্দোলনে যেত।
‘তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০ ঘণ্টা আটক রেখে মামলা দিয়েছে। আমি সরকার বিরোধী সংগঠনে আছি, আমি তো সরকার বিরোধী শ্লোগান দেব। বিরোধী দল কখনও সরকারের পক্ষে শ্লোগান দেবে?’
তিনি দাবি করেন, সোহাগের সঙ্গে শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সে গত একমাস ধরে কার্যকরী সদস্য হিসেবে ছাত্র অধিকার পরিষদে আছে।
নাসরিন আক্তার আরও বলেন, ‘আমি আজকে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রক্টর অফিসে যাব। মামলা তুলে না নিলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হব। না হলে কালকে আমাকে ধরে নিয়েও বলবে আমি ছাত্র শিবির করি, মামলা দেবে।’
সোহাগের নামে মামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, একজন শিক্ষার্থীর মত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আন্দোলন করার দায়ে সম্পূর্ণ ইখতিয়ার বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘসময় আটকে রেখে তাদের হেনস্থা করেছে। এটি সম্পূর্ণ অন্যায় ও অসাংবিধানিক যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর করতে পারেন না।