বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত বিচার বিশ্লেষণ করে নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাতে মেশিনের সংখ্যা হিসাব করে কত আসনে তা ব্যবহার করা হবে, সেই হিসাব কষা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়া কমিশনের একজন কমিশনার সম্প্রতি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা ১০০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে চান।
তবে কমিশন বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে, যদি নতুন মেশিন কেনা না হয়, তাহলে ১০০ আসনে ভোট করা কঠিন। ৮০টির মতো আসনে ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা আছে।
বাংলাদেশের বিবদমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভোটে ইভিএম ব্যবহার নিয়েও আছে বিভক্তি। আওয়ামী লীগ এবং সমমনারা ইভিএম চাইলেও বিএনপি এবং সমমনারা এর ঘোর বিরোধী।
ইভিএমে ভোট করা নিয়ে গত জুনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মত নেয় নির্বাচন কমিশন। এই সংলাপ অবশ্য বিএনপি ও তার জোটের শরিকরা বর্জন করেছে। যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে অর্ধেক এই যন্ত্র ব্যবহারের কথা বলেছে, বাকি অর্ধেক দল বলেছে, এই যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত হবে না।
অন্যদিকে বিএনপি ও তার জোটের শরিকদের অবস্থান হলো, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা কোনো ভোটে অংশ নেবে না। তারা ইভিএম ব্যবহারেরও ঘোর বিরোধী। সেই হিসাবে ইভিএমের বিরোধিতাকারীর সংখ্যাই বেশি।
নির্বাচন কমিশন কী করবে, সেটি এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন, কিছু আসনে ইভিএমে আর সিংগভাগ আসনে ব্যালটে ভোট নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দুই ধরনের ভোট পদ্ধতি থাকার পেছনে পর্যাপ্তসংখ্যক মেশিন না থাকার পাশাপাশি ইভিএম এবং ব্যালটের আসনের মধ্যে পরিসংখ্যানগত কোনো পার্থক্য হয় কি না, সেটিও জনগণকে দেখানো যাবে।
গত সংসদ নির্বাচনে যে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেগুলোতে ভোটের হার ব্যালটে নেয়া আসনগুলোর তুলনায় অনেক কম ছিল। পরাজিত জোটের অভিযোগ ছিল, ব্যালটে আগের রাতে সিল মেরে বাক্স ভরা হয়েছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর ১৫ জুন স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন ইউনিটে যে ভোট হয়, সেখানে ইভিএম নিয়ে তেমন কোনো বিতর্ক হয়নি। কিছু এলাকায় আঙুলের ছাপ না মেলা এবং বিশেষ করে বয়স্কদের ভোট প্রদান নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে কেবল।
এই অবস্থায় আগামী মঙ্গলবার বেলা ৩টায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের কমিশন সভায় আলোচ্যসূচিতে ইভিএমের বিষয়টি রাখা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
তবে কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, চলতি মাসে না হয় আগামী মাসের শুরুতে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
কমিশন যখন ইভিএম নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন বেশ কয়েকটি যন্ত্র চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কিছু নষ্ট হয়েছে আগুনে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ১২০ বলে জানান ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান।
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে মোট দেড় লাখ মেশিন কিনেছে নির্বাচন কমিশন।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৯৩ হাজারের মতো ইভিএম রাখা হয়েছে। নির্বাচনের সময় সেখান থেকে যন্ত্রগুলো পাঠানো হয়। আর বিএমটিএফে সংরক্ষিত আছে প্রায় ৫৫ হাজার যন্ত্র।
কত আসনে ইভিএম ব্যবহার করবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে আরেক কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আলোচনা চলছে। সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন। যদি আমরা একমত হতে পারি, তাহলে এ মাসের মধ্যেই। না হলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে জানতে পারবেন।’
তবে একই সঙ্গে ইভিএম ও ব্যালটে ভোট হবে জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার হবে। কিন্তু কত আসনে হবে, সেই বিষয়ে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পরিনি। এটা নিয়ে আমরা মতবিনিময় করছি। আলোচনা করছি। আমাদের সক্ষমতা কী আছে, কত ইভিএম আছে, আমাদের প্রশিক্ষিত জনবল কত আছে, সাপোর্টিং জনবল কত আছে, এগুলো দেখছি।
‘এগুলো দিয়ে কত আসনে ভোট করা যাবে। আর যদি বেশি করতে চাই, আরও কত (ইভিএম) লাগবে, তাতে কত টাকা লাগবে, এ জন্য নতুন প্রজেক্ট নিতে হবে কি না। সেই সময় আমাদের আছে কি না। প্রকিউরমেন্ট করতে, প্রশিক্ষণ দিতে, এসব নিয়ে আলোচনা চলছে।’
বর্তমানে কমিশনের হাতে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে ৮০ আসনে ভোট করা সম্ভব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যদি ৩০০ আসনে সক্ষমতা থাকে, ভোটাররা যদি ভোটার এডুকেশন থাকে। স্বাচ্ছ্যন্দবোধ থাকত। রাজনৈতিক দল যদি বেশির ভাগ চাইত, তাহলে ৩০০ আসনে করে ফেলতাম। যে জিনিস ভালো সেটা রেখে আপনি যাবেন কেন?’
ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নিয়ে বিতর্ক সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কমিশনার বলেন, ‘আপনাকে (রাজনৈতিক দল) ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। আপনি আসেন নাই। দূরে বসে কথা বললে হবে? কোনো স্পেশালিস্ট নিয়ে আসেন নাই। বিএনপি নিয়ে চিন্তা করছি না।’