পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রক্ষা করতে না পারার পেছনে রাজনৈতিক ব্যর্থতা আছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু অনেককে ফোন করেছিলেন, কিন্তু কোনো রাজনৈতিক নেতা ছুটে আসেননি বা প্রতিরোধের ডাকও দেননি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের এ ব্যর্থতার দায় আমাদের চিরদিন বহন করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেদিন বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে কারও তাগিদ ছিল না। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এতগুলো প্রাণ গেল, এতগুলো রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে, রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে মিশেছে কিন্তু কেউ ছুটে আসেনি। যদিও শুধু বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছুটে এসে জীবন দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জিয়া জড়িত না থাকলে বঙ্গবন্ধুকে কেউ হত্যা করার সাহস পেত না।' হত্যাকাণ্ডের আগে একাধিক ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকে জিয়া উপস্থিত ছিল বলে দাবি করে আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর জিয়া ডালিমকে বলেছিলেন, তুমি খুব ভালো কাজ করেছ।' ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেও বিএনপি হত্যা করতে চেয়েছিল বলে উল্লেখ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া তারেক জিয়ার প্রত্যক্ষ মদদে একুশে আগস্টের সমাবেশে গ্রেড হামলা করেছিল যা ওই ঘটনার মূল খলনায়ক মুফতি হান্নান স্বীকার করেছেন।’
ওবায়দুল কাদের বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ফখরুল সাহেব (বিএনপি মহাসচিব) মাঝেমধ্যে কথা বলতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ফেলে দেন। কিন্তু কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের রক্তস্রোত আমরা ভুলিনি। আইভি রহমানসহ বহু নেতাকর্মীর রক্ত আমরা ভুলে যাইনি। ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত হামলা চালিয়ে আমাদের নেত্রীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। পরে এফবিআইয়ের তদন্তও স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান বলেছিলেন, ‘আমরা হাওয়া ভবনের সিগন্যাল পেয়ে হামলা চালিয়েছি।’
১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের দুটি ঘটনাতেই জিয়া পরিবারের সম্পৃক্ততা আছে বলে মন্তব্য করেন কাদের।
এ দেশে আন্দোলনে জিতলে নির্বাচনেও জেতা যাবে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব, কোথায় আন্দোলন? সোনার হরিণ দেখা তো দিল না আজও। আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা না দিলে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন কোনোদিনও দেখা দেবে না। এ দেশে আন্দোলনে জিতলে নির্বাচনেও জেতা যাবে। ষড়যন্ত্র করে কাউকে হত্যা করতে পারবেন কিন্তু ক্ষমতায় যেতে পারবেন না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব মাঝে মাঝে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ফেলেন। আমাদের কত চোখের পানি কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে গেছে সে হিসাব কি আপনাকে দেব? আন্দোলন করবেন। ব্যর্থ হলে নন্দ ঘোষ আওয়ামী লীগ। ১৩ বছর ধরে কত শুনলাম রোজার ঈদের পরে, কোরবানির ঈদের পরে আন্দোলন। দিন যায়, রাত যায়, পদ্মা সেতুতে কত পানি গড়িয়ে যায়। কিন্তু ফখরুল সাহেবদের আকাঙ্ক্ষিত আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা যায় না। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দিল্লি দূরস্ত।’
আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘যে বুলেট শেখ হাসিনাকে শেখ রেহানাকে এতিম করেছে, সে বুলেট বেগম জিয়া আপনাকেও বিধবা করেছে। বাঁচতে পারেননি। অনেক খুনির ফাঁসি হয়ে গেছে। কারও কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যাচ্ছে না। কানাডা, আমেরিকা তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না। আজকে আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করব খুনিদের ফিরিয়ে দিন। এটা বাংলার মানুষের দাবি। কেন খুনিদের ফেরত দিচ্ছেন না? ৪৭ বছর চলে গেছে। আমাদের এক কথা এক দাবি আমরা খুনি চক্র রাশেদ, নূর, ডালিম এদের ফেরত চাই।’
তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব কষ্ট প্রকাশ করে কী করবেন? শেখ হাসিনাকে আল্লাহ ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি ভাগ্যবতী। আল্লাহ এই দেশে একজনকে সৃষ্টি করেছেন স্বাধীনতার জন্য, আরেকজনকে করেছেন মুক্তির জন্য। শোককে শক্তিতে পরিণত করে আপসহীন কান্ডারি শেখ হাসিনা। অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।