বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সর্বনিম্ন ভাড়া ১০, তবে প্রজাপতি ও পরিস্থানে ২৫

  •    
  • ১২ আগস্ট, ২০২২ ১৩:০৭

এটি অবশ্য কেবল এই দুটি পরিবহন কোম্পানির চিত্র নয়, রাজধানীতে বছরের পর বছর ধরে প্রায় প্রতিটি পরিবহন কোম্পানি এই প্রতারণা করে আসছে। এমনকি এ থেকে বাদ নয় সরকারি সংস্থা রাজউক পরিচালিত চক্রাকার বাস, যেটি চলে হাতিরঝিলে। বরং ইজারাদারের স্বার্থ দেখতে গিয়ে রাজউক জনসাধারণের স্বার্থ উপেক্ষা করছে। তার থেকেই দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা এই বাসে এবার আরও বেশি আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু নগরবাসীর স্বার্থ দেখার দায়িত্ব যাদের, তারা পুরোপুরি চুপ।

সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতি কিলোমিটারের বাসভাড়া আড়াই টাকা হিসাব করে ন্যূনতম ১০ টাকা করলেও বাস্তবতা ভিন্ন।

ওয়েবিলের নামে কালশী থেকে জোয়ারসাহারা পর্যন্ত ভাড়া ২৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এই পথের দূরত্ব ৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার। সরকারি হিসাবে ভাড়া আসে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। আইন অনুযায়ী ১১ টাকা নেয়া সম্ভব নয় বিধায় নিতে হতো ১০ টাকা। ফলে এই গন্তব্যেও যাত্রী ঠকছে ১৫ টাকা।

কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে উত্তরার কামারপাড়া রুটে চলাচল করে প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহন। তাদের ভাড়ায় এমন চিত্র দেখা গেছে। এই বাসগুলোতে একটি চেকে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ২৫ টাকা।

নির্ধারিত চেকের আগে উঠলে যাত্রী যেখানেই নামুক, তাকে এই পরিমাণ ভাড়া দিতেই হবে। তবে এমন নয় যে, সেই চেকের পর পরবর্তী চেক পর্যন্ত পুরো ভাড়াই আদায় করা হয়। আবার এমনও না যে, দুই চেকের মধ্যে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার, যার ভাড়া বর্তমান হারে ২৫ টাকা হয়। দূরত্ব প্রায় অর্ধেক।

মোহাম্মদপুর থেকে মিরপুর বাংলা কলেজ পর্যন্ত ৫.৩ কিলোমিটার দূরত্বে যাত্রী যেখানেই নামুক না কেন ভাড়া দিতে হবে ২৫ টাকা। অথচ সরকারি হিসাবে এই পথের ভাড়া আসে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা। ভাড়ায় এখন আর পয়সার ব্যবহার নেই বলে সেটা সর্বোচ্চ নেয়া সম্ভব ১৩ টাকা। কারণ আইন অনুযায়ী ভোক্তার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবামূল্যের কম নেয়া গেলেও বেশি নেয়া সম্ভব নয়।

এই হিসাবে এই গন্তব্যে একজন যাত্রীর কাছ থেকে বেশি নেয়া হচ্ছে ১২ টাকা। আর কিলোমিটারপ্রতি আড়াই টাকার বদলে ভাড়া পড়ছে ৪ টাকা ৭১ বয়সা। এই ২৫ টাকায় অবশ্য মিরপুর ১ ও ১০ নম্বরেও যাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভাড়ার হার কিছুটা কম পড়লেও তা সরকার নির্ধারিত হারের দেড়গুণেরও বেশি।

মিরপুর-১ বা ১০ বা ১১ থেকে বাসে উঠে কেউ বিমানবন্দর সড়কে যেতে চাইলে আবার এভাবে ঠকতে হয়। কালশীতে একটি চেক বসিয়েছে। সেটি পার হলেই ভাড়া দিতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। আর কালশী চেক থেকে খিলক্ষেত গেলে ভাড়া দিতে হচ্ছে উত্তরা পর্যন্ত পুরো গন্তব্যের, যদিও খিলক্ষেত থেকে দূরত্ব কমসে কম সাত কিলোমিটার।

খিলক্ষেতের যাত্রীরা পুরো পথের ভাড়া দিতে না চাইলে তাদের নামতে হবে জোয়ারসাহারা পর্যন্ত। তবে সেখানে যাত্রী নামে কমই। ইচ্ছা করেই এমন একটি জায়গায় চেক বসানো হয়েছে, যেখানে যাত্রীর উঠানামা কম। কেবল এক কিলোমিটারের জন্য বাড়তি ১৫ টাকা আদায় করা হয়।

আবার পুরো পথের ভাড়া নিলেও মাঝে যাত্রী উঠানামা করা হয় না, এমন নয়। কালশীর পর পুরো পথে যেখানেই যাত্রী হাত তোলে, বাস ফাঁকা থাকলে সব জায়গায় থামে বাস, আর ইসিবি চত্বরে পুরো একটি স্টপেজ আছে। কিন্তু যাত্রী সেখানে নামলেও তাকে ভাড়া দিতে হবে কমসে কম জোয়ারসাহারা পর্যন্ত। অথচ এর পরে আরও একটি স্টপেজ আছে এমইএইচে।

এটি অবশ্য কেবল এই দুটি পরিবহন কোম্পানির চিত্র নয়, রাজধানীতে বছরের পর বছর ধরে প্রায় প্রতিটি পরিবহন কোম্পানি এই প্রতারণা করে আসছে। এমনকি এ থেকে বাদ নয় সরকারি সংস্থা রাজউক পরিচালিত চক্রাবাস বাস, যেটি বলে হাতিরঝিলে। বরং ইজারাদারের স্বার্থ দেখতে গিয়ে রাজউক জনসাধারণের স্বার্থ উপেক্ষা করছে। আর থেকেই দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা এই বাসে এবার আরও বেশি আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু নগরবাসীর স্বার্থ দেখার দায়িত্ব যাদের, তারা পুরোপুরি চুপ।

গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর নগরীকে বাসভাড়া কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করার পর ভাড়ার এই প্রতারণার প্রমাণ পেয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করলেও তা কার্যকর হয়নি।

কোম্পানিগুলো সে সময় মুচলেকা দেয় যে, তারা বাড়তি ভাড়া আদায় করবে না। কিন্তু বাড়তি ভাড়াই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং তেলের দাম এবার লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর পর সেই বাড়তির ওপর আরও বাড়তি আদায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন গন্তব্যে দেখা গেছে, বর্তমান হারের চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছিল আগে থেকেই, এবার নেয়া হচ্ছে আরও বেশি।

বাস ভাড়ার এই প্রতারণার প্রমাণ হাতেনাতে দেখে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। এরপর মন্ত্রী তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আইন মেনে চলার জন্য বাস কোম্পানির সুমতির ওপর ভরসা করার কথা বলেছেন। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, নইলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।

তবে এমন হুঁশিয়ারি গত নভেম্বরেও এসেছিল। ব্যবস্থা আসলে নেয়া হয়নি। আর বিআরটিএ কর্মকর্তারা এবার গণমাধ্যমকে এড়াচ্ছেন। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার থেকে অন্য কর্মকর্তাদের বারবার ফোন করলেও কেউ সাড়া দিচ্ছেন না।

গতবারের মতোই সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলেছে, বৃহস্পতিবার থেকে বাস ওয়েবিলে চলবে না। যাত্রীরা ভাড়া দেবেন কিলোমিটার হিসেবে।

এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দিন প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহন দুটিকে দেখা যায় অবৈধ ওয়েবিলে ভাড়া নিতে।

পরিস্থানের বাসের যাত্রী মো. সুমন বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে আমি বাংলা কলেজ যাব। স্টুডেন্ট ভাড়া দিয়েছি ১০ টাকা। বাসে যিনি টাকা উঠাচ্ছেন তিনি আমার কাছে আরও পাঁচ টাকা দাবি করেন। আমি দিতে না চাইলে জোর করেন।’

বাসে ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা আল-আমিন বলেন, ‘সব বাসে ওয়েবিল বন্ধ হলেও প্রজাপতি, পরিস্থান ও বসুমতিতে ওয়েবিল চলে।’

বাংলা কলেজের ভাড়া ২৫ টাকা কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে আল-আমিন বলেন, ‘এই পথে একটা ১৩ টাকা ও একটা ১২ টাকার চেক আছে।’

প্রজাপতি বাসে আসাদ গেট থেকে বাংলা কলেজের ভাড়া নিচ্ছে ২০ টাকা। চার কিলোমিটারের এই পথে ভাড়া আসে ১০ টাকা। বেশি নিচ্ছে ১০ টাকা। অর্থাৎ দিগুণ হারে দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।

প্রজাপতি বাসের যাত্রী আল নাহিয়ান বলেন, ‘প্রজাপতি বাস মিরপুর-১ নম্বর থেকে টোলারবাগ পার হলেই দেড় কিলোমিটার পথে ১৫ টাকা ভাড়া রাখে। এই ভাড়ায় আসা যায় কলেজগেট পর্যন্ত। ভাড়া আগে ছিল ১০ টাকা। এখনও ওয়েবিলে চলতেসে। মিরপুর রোডের ম্যাক্সিমাম গাড়ির এখনও ওয়েবিল চালু।’

দিগুণ ভাড়া কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. হাফিজ বলেন, ‘আমি জানি না, চেকারকে জিজ্ঞাসা করেন।’

দারুসসালাম পয়েন্টের প্রজাপতি বাসের চেকার মো. জালাল বলেন, ‘আমাদেরকে মালিক পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয় নাই। তারা আগে যেভাবে বলছে সেই ভাবে ভাড়া নিচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর