বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওয়েবিল থাকবে না ঘোষণা দিয়ে কয়েক মাস সময় দাবি

  •    
  • ১১ আগস্ট, ২০২২ ১৮:৪৮

ওয়েবিল বন্ধ করতে এত মাস লাগবে কেন? ওয়েবিল বন্ধের জন্য এনায়েত উল্লাহর ঘোষণা এই নিয়ে চতুর্থ দফা। আসলে তারা কী করতে চায় এটাই বড় প্রশ্ন: যাত্রীকল্যাণ সমিতি

রিমন কর্মকার নামে এক যাত্রী সকালে নিউজবাংলার ফেসবুক পেজে ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি লেখেন, ‘তরঙ্গ প্লাস আজকে ওয়েবিল কাটছে। কিন্তু কাল নিউজে দেখলাম কোনো চেকার থাকবে না।’

ওয়েবিলে বাস চলছে কি না, একজন গণমাধ্যমকর্মী ফেসবুকে এই প্রশ্ন রাখার পর ফাহিদ মোনায়েম নামে একজন কমেন্টে লেখেন, ‘রামপুরা আলিফ, রবরব, অছিম, রাজধানী, স্বাধীন, রমজান এরা ওয়েবিল ও চেক করছে। চেক ও চেকের আগে উঠলেই চেকের বিল দিতে হবে।’

হাসান ইমন লেখেন, ‘রামপুরা বনশ্রী, মেরাদিয়া, ত্রিমোহনী ব্রিজে চেকার দেখা গেছে, রাজধানী, অছিম, আলিফ পরিবহনে দেখা গেছে।’

অর্থাৎ রাজধানীতে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হয় যে কৌশলে, সেই ওয়েবিল তুলে দেয়ার অঙ্গীকার করেও কথা রাখেননি বাসমালিকরা।

ওয়েবিলে নয়, কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া কাটা হবে- বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মালিক সমিতি এমন ঘোষণা দেয়ার পরও বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাস ভাড়ায় সেই নৈরাজ্য চলছেই।

বাসমালিকদের সমিতি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে কয়েক মাস সময় লাগবে। এমনকি এ নিয়ে ইতিবাচকভাবে লেখার অনুরোধও করেছেন তিনি।

তবে অন্তত ১৬টি বাস রুটে খোঁজ নিয়ে একটাতেও এনায়েত উল্লাহর অনুরোধের ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সাভার থেকে যাত্রীবাড়ী রুটে চলা এমএম লাভলী ও লাব্বাইক পরিবহন, মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রী পর্যন্ত চলা স্বাধীন পরিবহন, ঘাটারচর থেকে উত্তরা রুটে চলা প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহন, গাবতলী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলা বসুমতি, মোহাম্মদপুর থেকে শাহবাগ হয়ে বনশ্রী পর্যন্ত চলা তরঙ্গ প্লাস, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি থেকে বনশ্রী ও মিরপুর-১ থেকে বনশ্রী রুটে চলা আলিফ পরিবহন, গাবতলী থেকে বাড্ডা লিংক রোড রুটে চলা রবরব পরিবহন, গাবতলী থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুটে চলা আছিম পরিবহন, গাবতলী থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুটের রাজধানী পরিবহন, মোহাম্মদপুর থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে বনশ্রী রুটের রমজান পরিবহন, রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান রুটের শ্রাবণ পরিবহন, মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে কেরানীগঞ্জ রুটের দিশারী পরিবহনসহ অসংখ্য কোম্পানি এখনও ওয়েবিলে ভাড়া নিচ্ছে।

সাংবাদিক জেনে ওয়েবিলে ‘নাটক’

ওয়েবিলে বাড়তি ভাড়া কেন নিচ্ছে জানতে চাইলে এম এম লাভলী পরিবহনের ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. আনোয়ার বলেন, ‘ভাই আমি নতুন মানুষ। অল্প কয়েক দিন এই বাসে কাজ করতেছি। বুঝি নাই।’

রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় আনোয়ারের সঙ্গে কথোপকথন চলার সময় চেকার হিসেবে বাসে উঠে যাত্রী গুনতে শুরু করেন রিফাত হোসেন রাব্বি নামে একজন। কতজন ছাত্র আছেন, পুলিশ পাস আছে কি না, এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তিনি ওয়েবিলে সই করার পরই নিজের অবস্থান পাল্টে ফেলেন।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করতেই রাব্বির মুখে পুরো উল্টো বুলি। ওয়েবিলে যাত্রী তোলার দায় তিনি ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা আনোয়ারকে দোষারোপ শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘তুমি কেন বেশি ভাড়া নিছ?’

আনোয়ার প্রথমে অস্বীকার করে বলেন, ‘নেই নাই।’ পরে প্রমাণ দেয়ার পর বলেন, ‘ভাই ভুল হয়ে গেছে।’

এরপর রাব্বী ওয়েবিলে যাত্রীসংখ্যা লিখে ওয়েবিলের উল্টো পাশের পৃষ্ঠায় ‘২০০ টাকা জরিমানা’ লিখে দেন।

এই ২০০ টাকা কে নেবে, আদৌ কেউ নেবে কি না, বা নিলে যাত্রীর লাভ কী, এমন অনেক প্রশ্নের জবাব না জেনেই সেখান থেকে ফিরতে হলো।

কয়েক মাস সময় লাগবে: এনায়েত উল্লাহ

গত নভেম্বরের মতোই এবারও ওয়েবিলে বাস না চালানোর ঘোষণা দিয়েও যাত্রীদের ঠকিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে বাসমালিক সমিতির এই নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদেরকে কাজটা করতে দেন না ভাই। আমরা তো শুরু করলাম মাত্র। আমাদেরকে করতে দেন। শুরুতে যদি নেগেটিভভাবে দেখেন তাহলে আমাদের কাজটা করতেও অসুবিধা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কীভাবে মনে করেন এটা দুই-চার ১০ দিনে হয়ে যাবে? আমরা এটা নিয়ে কয়েক মাস কাজ করব। সব ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।’

কীভাবে চেষ্টা করছেন?- এমন প্রশ্নে এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘এদেরকে (বাস কোম্পানি) সিস্টেমে আনার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করতেছি। গতকালও আমি বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বসেছি। আমাদের ৯টা দল মাঠে কাজ করতেছে। একেক দলে মিনিমাম পাঁচজন কাজ করছে।’

গত নভেম্বরেও এনায়েত উল্লাহর বাস মালিক সমিতি ঠিক এই কাজগুলো করেছিল এবং পরে এনায়েত নিজে বলেছেন, ওয়েবিল ছাড়া সম্ভব নয়।

ওয়েবিলে চলবে না, ঘোষণা নতুন নয়

ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর গত নভেম্বরে কিলোমিটারে বাস ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করার পর বিআরটিএর ঘোষণা ছিল, ওয়েবিল অবৈধ। সেটি থাকবে না। এমনকি আইন না মানলে বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের হুমকিও দেয়া হয়।

সে সময় খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন, ওয়েবিলে বাস চলবে না। ভাড়া কাটা হবে কিলোমিটার হিসেবে।

এবার লিটারে তেলের দাম আরও ৩৪ টাকা বাড়ানোর পরও বিআরটিএ থেকে একই কথা বলা হলেও কার্যত সড়কে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই তাদের। আর ইচ্ছাও আছে কি না, সেই প্রশ্ন ওঠে এ কারণে যে সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, যদি ওয়েবিলে চলে এবং তাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযোগ পায়, তাহলে তারা ব্যবস্থা নেবেন। অর্থাৎ বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানেন না, রাজধানীতে ওয়েবিলে কোনো বাস চলে কি না।

তিনি বলেন, ‘তারা ওয়েবিল বন্ধ করে পজ মেশিনের মাধ্যমে ভাড়া কাটুক। ঢাকা নগর পরিবহন, বিআরটিসি এই পজ মেশিনের মাধ্যমে ভাড়া কাটে। বাসে একটা করে পজ মেশিন দিয়ে দিলেই তো দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া কাটা সহজ হয়।’

‘এসব ঘোষণা লোক দেখানো’

যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন ওয়েবিল নিয়ে বাসমালিকদের ঘোষণা লোক দেখানো।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ওয়েবিল বন্ধ করতে এত মাস লাগবে কেন? ওয়েবিল বন্ধের জন্য এনায়েত উল্লাহর ঘোষণা এই নিয়ে চতুর্থ দফা। আসলে তারা কী করতে চায় এটাই বড় প্রশ্ন।’

কিলোমিটার হিসেবে নয়, চলছে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায়

কিলোমিটারে আড়াই টাকা, সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা- এই নিয়মের থোরাই কেয়ার করছে নগরে চলা বাসগুলো। কেউ সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করছে ১৫ টাকা, কেউবা ২০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি। আবার চার কিলোমিটারের ভাড়া ২০ বা ২৫ টাকা- এভাবেও আদায় চলছে।

চার কিলোমিটারের জন্য ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির বাসে এই পথে ২৫ টাকা, কেউ ২০ টাকা, কেউ এমনকি ৩০ টাকাও আদায় করছে।

বেসরকারি বাস কোম্পানির পাশাপাশি হাতিরঝিলে সরকারি সংস্থা রাজউক পরিচালিত চক্রাকার বাসও এই অনিয়মের বাইরে নয়। তিন কিলোমিটারে ২০ টাকা, চার কিলোমিটারে ২৫ টাকা আদায় চলছে সেখানে, অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত সর্বোচ্চ ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর