ওমান যাবেন নোয়াখালীর মো. রাসেল। হাতে থাকা টিকিটে সময় দেয়া আছে, ১০ আগস্ট বেলা দেড়টায়।সময়মতোই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির হন রাসেল। কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। কারণ, তিনি যে বিমান কোম্পানির টিকিট কিনেছেন, বেলা দেড়টায় তার কোনো ফ্লাইটই ছিল না।
দিশেহারা হয়ে রাসেল বিমানবন্দরে আয়োজিত গণশুনানিতে আসেন। এতে তার ভোগান্তির কথা তুলে ধরে সমাধান চান। যাত্রী সেবার মান উন্নত করার লক্ষ্য নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ করে এই আয়োজন।
রাসেল এই অভিযোগ জানানোর পরপরই কুমিল্লা থেকে আসা মো. আনিসও একই অভিযোগ করেন। জানান, তাদের সঙ্গে আরও পাঁচজন এ রকম বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।এরা সবাই টিকিট কিনেছিলেন ওমানের বিমান সংস্থা সালাম এয়ারের। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিমান সংস্থাটির বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ৬টি। বিশ্বের ৩০টি গন্তব্যে ফ্লাইট চালায় তারা।
ভোগান্তিতে পড়া মো. রাসেল বলেন, ‘আমি অনলাইনে টিকিট কাটছি। ওদের ফোন দিছিলাম। ওরা বলছে টিকিট কনফার্ম আছে। নোয়াখালী থেকে আসছি অনেক কষ্ট কইরা। এখানে আইসা দেখি ফ্লাইট নাই। এহন আমি ঢাকায় থাকুম কোনহানে, খামু কই?’তার এমন অভিযোগের পর সালাম এয়ারের উপস্থিত প্রতিনিধির কাছে ব্যাখা চান গণশুনানির প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান।সেই প্রতিনিধি জানান, সালাম এয়ারের ফ্লাইট আসে ভোর ৫টায়। সেটি ৫টা ৪৫ মিনিটে চলে যায়। রাসেল যে টিকিটটা কেটেছেন সেটি দেশের বাইরে থেকে কনফার্ম করা। সেখানে যোগাযোগ করলে তিনি সমাধান পাবেন।
পরে বেবিচক চেয়ারম্যান সেই প্রতিনিধিকে যাত্রীর টিকিট দেখার পরামর্শ দেন। সেই টিকিটে ফ্লাইটের সময় উল্লেখ করা দেড়টা। এরপর সালাম এয়ারের প্রতিনিধিকে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাত্রীর কিন্তু দোষ নাই। তার টাইম দেড়টায় লেখা আছে। যে এজেন্সি এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে দেশে হোক বা বিদেশে হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এই বিড়ম্বনায় পড়া রাসেলরা ঢাকায় যতক্ষণ অবস্থান করবেন, তার থাকা-খাওয়ার সব খরচ সালাম এয়ারকে মেটানোর নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, ‘এই যাত্রীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার পাশাপাশি যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। আপনারা ব্যবস্থা নেবেন।’
সালাম এয়ারের যে এজেন্সি এই টিকিট বিক্রি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানিয়ে দেন বেবিচক চেয়ারম্যান। বিমান সংস্থার প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র রাখেন। এই এজেন্সির বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়ে আমাদের জানাবেন। সেই এজেন্সি যে দেশের হোক, সেই দেশের সিভিল এভিয়েশনকে আমি জানাব যে, তোমার দেশের এজেন্সি আমার দেশের যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে।’
যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে
যাত্রীদের সঙ্গে বিমানবন্দর কর্মীরা যেন ভালো ব্যবহার করেন সে জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স চালুর কথাও জানান বেবিচক চেয়ারম্যান। বলেন, ‘যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে কেউ এখানে চাকরি করতে পারবে না।’তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে ভবিষ্যতে যেসব স্টেকহোল্ডার কাজ করবে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হবে। ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, পুলিশ সবাই এই আওতায় থাকবে। যাত্রীদের কথা চিন্তা করে এটা করা হচ্ছে।’
সম্প্রতি এক যাত্রীকে কাস্টমস কর্মকর্তার থাপ্পড় দেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মফিদুর বলেন, ‘যাত্রীদের সম্মান যাতে ক্ষুণ্ন না হয়ে সেই জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। কাস্টমস কর্মকর্তার এই ঘটনায় আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। যাত্রী ভুল করে থাকলেও তার গায়ে আঘাত করার অধিকার নেই। যিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তার ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শুধু তাকে সাময়িক বরখাস্ত না, তার ব্যাপারে তদন্ত চলছে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এটা করছে।’অপরিচিতদের লাগেজ বহন নয়
প্রবাসীদের উদ্দেশে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অপরিচিত কারও কাছ থেকে লাগেজ বা ব্যাগ নেবেন না। যদি নেন তাহলে নিশ্চিত হয়ে নেবেন ভেতরে কী আছে। কারণ, এর পুরো দায়দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। ‘আপনার আত্মীয় দিয়েছে, এটা আইন শুনবে না। আমাদের এখানে সিকিউরিটি সিস্টেম ভালো করা হয়েছে। অনৈতিক কাজের সঙ্গে কেউ জড়িয়ে পড়লে ছাড় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
শাটল বাসের ব্যবস্থা করা হবে
দেশের বাইরে থেকে বিমানবন্দরে নামার পর গাড়ি ভাড়ায় ভোগান্তি, স্বাভাবিক ভাড়ার দ্বিগুণ বা তিন গুণ দাবি করার যে সমস্যা, সেটি নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন বেবিচক চেয়ারম্যান। জবাবে তিনি প্রবাসী যাত্রীদের জন্য শাটল বাস চালুর ঘোষণা দেন।
মফিদুর বলেন, ‘প্রবাসী ভাইয়েরা অনেক প্রতারিত হন পরিবহন সেক্টরের কাছে। আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। এটা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা শাটল বাসের ব্যবস্থা করব। আশা করছি দ্রুত হয়ে যাবে।’এই বাস কোথায় যাবে সেটিও জানান বেবিচক প্রধান।
বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের নিয়ে বাস চলে যাবে উত্তরার দিকে। ওখানে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াবে। পরে দাঁড়াবে রেলওয়ে স্টেশনের সামনে। এতে যাত্রীরা আর জিম্মি হবে না।’
বিমানের কাছে বেবিচকের পাওনা কীভাবে আদায় করবেন- জানতে চাইলে মফিদুর বলেন, ‘তাদের যে বকেয়া আছে তারা আস্তে আস্তে পরিশোধ করে দেবে।’
নতুন দুই এয়ারলাইনসের অগ্রগতি প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের যদি চালু করতে হয় ঢাকার বাহিরে থেকে চালু করতে হবে। তবে থার্ড টার্মিনাল হয়ে গেলে পরে তারা ঢাকা থেকে ফ্লাইট চালু করতে পারবে।’
আরেকজনের প্রশ্ন ছিল, বিমানবন্দর দিয়ে ডলার পাচার ঠেকাতে কী নির্দেশনা দিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এ নির্দেশনা তো সরকার দিয়েছে। আমার দেয়ার কিছু নাই। আমি হলাম ঠেকানোর জন্য কেউ যদি নিতে চায় তাকে ঠেকাতে হবে। এ ধরনের নির্দেশনা এয়ারপোর্টকে দেয়া আছে। কারও ব্যাগে যদি এ রকম থাকে, তা চেক করবে। এ রকম সবাইকেই চেক করবে।’