বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বসুমতির সুমতি ফেরাবে কে?

  •    
  • ১০ আগস্ট, ২০২২ ১৩:১০

বসুমতি পরিবহনের ভাড়ার নৈরাজ্য নতুন নয়। গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণের পর বসুমতি এর চেয়ে বেশি হারে ভাড়া নেয়ার ১৬টি ঘটনার প্রমাণ পেয়ে অন্য ২৪টি কোম্পানির মতো এই কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলেরও সুপারিশ করে বিআরটিএ। কিন্তু আর বাড়তি ভাড়া আদায় করা হবে না-এই মুচলেকা দেয়ার পর এই চূড়ান্ত ব্যবস্থা আর নেয়া হয়নি। এবার যে ভাড়া ঠিক করা হয়েছে, তা তারা আগেই নিত। এবার বাড়তির ওপর নিচ্ছে আরও বেশি।

মিরপুর-১ নম্বরে বসুমতি পরিবহনের বাসে যাত্রীদের তোলার সময় চালকের সহকারী আগেই বলে নিচ্ছেন, ‘ওই এয়ারপোর্ট ৫০, এয়ারপোর্ট ৫০, এয়ারপোর্ট ৫০।’ যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে আপত্তি করলে তিনি তেজ দেখিয়ে বলছেন, ‘উঠলে উঠেন। না হয় নামেন মিয়া।’

কিলোমিটারপ্রতি আড়াই টাকা হারে ভাড়া ঠিক করার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ থেকে যে চার্ট দেয়া হয়েছে, তাতে এই পথের দূরত্ব দেখানো হয়েছে ১৬ কিলোমিটার। এই পথে ভাড়া হয় ৪০ টাকা, যা আদায় করা হতো আগে থেকেই। এখন বাড়তি আরও ১০ টাকা নেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এই পথের কিলোমিটার প্রতি ভাড়া আসে ৩ টাকা ১৬ পয়সা।

মিরপুর-১ থেকে কিলোমিটার চারেক দূরত্ব পেরিয়ে মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের জন্যও ভাড়া সেই ৫০ টাকাই ভাড়া আদায় হচ্ছে। এই হিসাবে এই পথের জন্য ভাড়া হচ্ছে ৪ টাকা ১৬ পয়সা হারে।

বসুমতি পরিবহনের ভাড়ার নৈরাজ্য নতুন নয়। গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণের পর বসুমতি এর চেয়ে বেশি হারে ভাড়া নেয়ার ১৬টি ঘটনার প্রমাণ পেয়ে অন্য ২৪টি কোম্পানির মতো এই কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলেরও সুপারিশ করে বিআরটিএ। কিন্তু আর বাড়তি ভাড়া আদায় করা হবে না- এই মুচলেকা দেয়ার পর এই চূড়ান্ত ব্যবস্থা আর নেয়া হয়নি।

গত নভেম্বরের পর বাস ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়ে ফোন করলে বিআরটিএর কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতেন। কিন্তু এবার ফোনের পর ফোন করেও তাদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না।

বাস ভাড়ার নৈরাজ্য এতটাই বেড়েছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ একটি বাসে চেপে পরিস্থিতি দেখতে বের হন।

তিনি মিরপুর-১১-এর পূরবী সিনেমা হল থেকে বনানীর কাকলী পর্যন্ত গিয়ে ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন ৩০ টাকা। কিন্তু এই পথের সরকার নির্ধারিত ভাড়া হয় ১৭ টাকা।

বাড়তি ১৩ টাকা দেয়ার পর তার উপলব্ধি হচ্ছে সাধারণ মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। এরপর তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

মন্ত্রী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে পরিবহন মালিকদের সুমতির ওপর ভরসা করার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, তিনি আশা করেন, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে যে কথা তারা দিয়েছেন, সেটি মেনে চলবেন। নইলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এমন হুঁশিয়ারি মন্ত্রী গত নভেম্বরেও অবশ্য দিয়েছেন। কিন্তু বাসযাত্রীর নিত্য ঠকে যাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ ওয়েবিল বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানেনই না যে ওয়েবিল এখনও আছে।

এবার বাস ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণার পর সাংবাদিকরা যখন তার কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চান, তখন তিনি বলেন, তাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে আছেন, তারা যদি অভিযোগ পান, ব্যবস্থা নেবেন।

ওয়েবিলের নামে কত টাকা বেশি নেয় বসুমতি

জ্বালানি তেলের দাম এবার লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানোর পরও দেখা যাচ্ছে বসুমতির সুমতি আসলে ফেরেনি। বরং বর্তমানে নির্ধারণ করে দেয়া হারের চেয়ে বেশি হারে তারা আগেই আদায় করত। এবার তা আরও বেড়েছে।

কালশী মোড় থেকে কেউ উঠলে তাকে কমপক্ষে বিমানবন্দর সড়কের জোয়ারসাহারা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হবে। এই পথের দূরত্ব ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার। ভাড়া হয় ১৫ টাকা ৭৫ পয়সা, কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ২৫ টাকা। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া হয় ৪ টাকার বেশি।

এই রুটের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলছেন, আগেও বসুমতি বেশি ভাড়া নিত। এখনও বেশি ভাড়া নেয়।

যাত্রীদের একজন মো. সুমন জানান, আনসার ক্যাম্প থেকে পল্লবী পর্যন্ত তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছে ২০ টাকা।

এই পথের দূরত্ব হয় ৫.৯ কিলোমিটার। এই হিসেবে ভাড়া আসে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ এখানে প্রতি কিলোমিটারের জন্য আদায় করা হচ্ছে ৩ টাকা ৩৯ পয়সা।

আরেক যাত্রী ফয়েজ আহমেদ জানান, ‘মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মিরপুর-১ নম্বরের ভাড়া ১০ টাকা। ওরা ১৫ থেকে ২০ টাকা নেয়। যার কাছ থেকে যা নিতে পারে। সব স্পটেই ভাড়া বেশি নেয় বসুমতি।’

‘আমারে না কইয়া কোম্পানির লোকেরে ধরেন’

চার্টে ৪০ টাকা উল্লেখ থাকলেও মিরপুর-১ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ৫০ টাকা নেয়ার কারণ জানতে চাইলে বসুমতির একটি বাসে ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চার্ডে ৪০ টাকা। কোম্পানির হিসাবে ৫০। এহন ১০ ট্যাকা আমি কইততে দিব? আমারে না কইয়া কোম্পানির লোকেরে ধরেন। কোম্পানি ওয়েবিলে ভাড়া নেয়। আর যাত্রীরা চার্ড ধইরা ভাড়া দিলে আমরা তো বিপদে পইড়া যামু।’

একই কোম্পানির অন্য একটি বাসের ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা মো. সুমনের বক্তব্যও একই রকম। তিনি বললেন, ‘কোম্পানি যেইডা কইছে, আমরা তাই করছি। আমাগো কিছু করার আছে?’

অন্য একটি বাসের ভাড়া কাটার দায়িত্বে থাকা যুবক নিজের নাম আকাশ উল্লেখ করে বলেন, ‘আগেই মিরপুর একেত্তে এয়ারপোর্ডের ভাড়া ৪০ ট্যাকা আছিল।’

৪০ টাকা তো বাড়তি ছিল- এই মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এক ট্যাকাও বেশি নেই না। কোম্পানি যে ভাড়া ঠিক কইরা দিছে, সেইটাই নেই।

‘মিরপুর একেত্তে এয়ারপোর্ড তিনডা চেক পড়ে। এক চেকের ভাড়া ২৫, আরেকটার ১৫ টাকা একটার ১০ ট্যাকা। তিন মিইল্যা ৫০ টাকা।’

কিলোমিটার হিসেবে ভাড়া না নিয়ে চেকের হিসাব দেয়ার কারণ কী- এমন প্রশ্নেও সেই আগের জবাব, ‘কোম্পানিরে জিজ্ঞাস করেন।’

দায় চালক-সহকারীর: কোম্পানি কর্মকর্তা

শ্রমিকরা কোম্পানির দিকে আঙুল তুললেও একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তারা নির্ধারিত ভাড়া আদায় করতে বলেছেন। বাড়তি আদায় করছেন শ্রমিকরা। তারা নিজেরাও কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছেন।

মিরপুর-১ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১০ টাকা বেশি নেয়ার কথা বিষয়টি জানালে বসুমতির গাজীপুর রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দুলাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ড্রাইভার-স্টাফরা তাহলে এগুলো করতেছে। আজকে আমিও কিছু অভিযোগ পেয়েছি। গাবতলী থেকে গাজীপুরের ৮৫ টাকার ভাড়া ৯০ টাকা নিচ্ছে। কালশী থেকে ৭৫ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা নিচ্ছে। আমি কয়েকটা গাড়িকে খুঁজে পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছি। তারা যে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ৫০ টাকা বলে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলেছে এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক।’

কিলোমিটারের হিসাবের বদলে অবৈধ ওয়েবিলে যাত্রী তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মালিকের হিসাব রাখার কারণে ওয়েবিল চালু আছে।’

এ বিভাগের আরো খবর