বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিআরটিএ ঘুমিয়ে, ফায়দা নিয়েই যাচ্ছে রাইদা

  •    
  • ৯ আগস্ট, ২০২২ ০৮:১৮

সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘোষণা, ঢাকায় বাস ভাড়া হবে কিলোমিটারপ্রতি আড়াই টাকা। কিন্তু থোরাই কেয়ার করা রাইদা পরিবহন আদায় করছে ৪ টাকা পর্যন্ত। অবৈধ ওয়েবিলও বাদ দিচ্ছে না তারা। বাস ভাড়ায় অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে গত ডিসেম্বর রাইদাসহ ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করেছিল বিআরটিএ। পরে কোম্পানিগুলো মুচলেকা দিয়ে পার পেয়ে যায়। তবে ভাড়ায় নৈরাজ্য থামেনি। আর চুপটি করে বসে আছে সরকারি সংস্থাটি। এমনকি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলছেন না কর্মকর্তারা।

বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর রুট পারমিট বাতিল থেকে অল্পে রক্ষা পাওয়া রাইদা পরিবহন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর আবার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় করছে।

বাড়তি ভাড়া আদায়ে এই পরিবহন কোম্পানিটিও অন্যান্য কোম্পানির মতো অবৈধ ওয়েবিলের কৌশল ব্যবহার করছে।

রাজধানীতে বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য এবং যাত্রীদের নিত্যদিন ঠকে যাওয়া ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ‘উটপাখির’ ভূমিকায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তীব্র।

গত নভেম্বরের শুরুতে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর রাজধানীতে কিলোমিটারপ্রতি বাস ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সে সময় দেখা যায়, বিআরটিএ যে হারে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, রাজধানীর বাসগুলো আগে থেকেই তার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করছিল।

ওয়েবিলের নামে নির্ধারিত হারের চেয়ে দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি হারে আদায়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসার পর বিআরটিএর অভিযানেও এর প্রমাণ মেলে।

পরে ১০ ডিসেম্বর বিআরটিএ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বারবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার কারণে ২৫টি বাসের রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল রাইদাও।

সে সময় বারবার জরিমানা দেয়ার পরও রাইদার বাসগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করেই যাচ্ছিল। কয়েক দিনের অভিযানে বসুমতি পরিবহনে সর্বোচ্চ ১৬ বার এবং রাইদায় ১৩ বার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ মেলে।

তবে বিআরটিএ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। শেষ পর্যন্ত রুট পারমিট আর বাতিল হয়নি। এবং কেন হয়নি, সেই ব্যাখ্যাও দেয়নি সরকারি সংস্থাটি।

পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান গত মার্চে নিউজবাংলাকে জানান, এই ২৫ কোম্পানি আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে যে নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নেবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই কর্মকর্তা সে সময় বলেন, ‘তারা আবেদন করায় কমিটি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই ২৫ কোম্পানির বাস বন্ধ করলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হবে। করোনার কারণে এমনিতেই বাস কমে গেছে, এই বাসগুলো বন্ধ করে দিলে আরও ঝামেলা হবে। ঢাকার মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে আমরা তাদের অবজারবেশনে রেখেছি। পরবর্তী মিটিংয়ে গত তিন মাসের অবজারবেশন তুলে ধরা হবে এবং ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এরপর পেরিয়ে গেছে আরও পাঁচ মাস। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল আরেক দফা। এবার লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ার পর ঢাকায় বাস ভাড়া ঠিক হয়েছে কিলোমিটার প্রতি আড়াই টাকা। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া থাকছে আগের মতোই ১০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি চার কিলোমিটার গেলে এই ভাড়া দিলেই চলবে।কিন্তু অনিয়মে ডুবে থাকা রাইদা এই বিধান মানবে কেন? তারা আগের মতোই কিলোমিটারের হিসাব বাদ দিয়ে তাদের ইচ্ছামতো একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে আরেকটি দূরত্ব পর্যন্ত ওয়েবিল বসিয়ে ভাড়া আদায় করছে।

আগে যে ওয়েবিলে ভাড়া রাখা হতো ১০ টাকা, সেখানে এখন নেয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। আগে যেখানে ভাড়া নেয়া হতো ১৫ টাকা, সেখানে এখন নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা।

এই বাসটি চলে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত। রুটের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। আড়াই টাকা হারে ভাড়া দাঁড়ায় ৪২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ৭০ টাকা। এবার ভাড়া বাড়ার আগে নিত ৬০ টাকা।

সায়েবাদাদের জনপদ মোড় থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে পুরো পথে ভাড়ার চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি।গত শুক্রবার তেলের দাম বাড়ানোর পর শনিবার রাতে বাস ভাড়ার বিষয়ে ঘোষণা আসে, কার্যকর হয় পরদিন থেকে।

নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি আদায় হচ্ছে কি না, এটি দেখতে অতীতের মতোই অকার্যকর পথে হাঁটছে। আট জন ম্যাজিস্ট্রেট নামিয়ে পরীক্ষা চলছে। আর এই সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ডেই আবার উঠে আসে রাইদার অনিয়ম।

যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার প্রমাণ পেয়ে রাইদা পরিবহনের একটি বাসকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রামপুরা সড়কে বাসটিতে থামানোর পর যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন। পরে তার প্রমাণও মেলে।কিলোমিটারে ৪ টাকা পর্যন্ত আদায়

এই পরিবহনে পুরো পথের জন্য ৭০ টাকা ভাড়া আদায় করায় প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া আসে ৪ টাকা ১১ পয়সা। কিলোমিটার প্রতি বেশি আদায় হচ্ছে ১ টাকা ৬১ পয়সা, অর্থাৎ বেশি নেয়া হচ্ছে ২৭ টাকা।

জনপথ মোড় থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত ৫০ টাকা ভাড়া গুনে রামিজ উদ্দিন ঠকেছেন ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। কারণ, ১৩ কিলোমিটারে আড়াই টাকা হারে ভাড়া আসে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা।

নিউজবাংলাকে রামিজ বলেন, ‘তারা একেকটা ওয়েবিলের বিপরীতে আগের ভাড়ার থেকে ৫ টাকা করে বেশি নিচ্ছে। আগে থেকেই তারা বেশি ভাড়া নেয়। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয় নাই।’

জুরাইন থেকে রামপুরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটারের জন্য রাইদায় ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩৫ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে পড়ে ৩ টাকা ১৮ পয়সা। অথচ নেয়ার কথা ২৭ টাকা ৫০ পয়সা। বেশি নিচ্ছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা।

ঠকে যাওয়া যাত্রীদের একজন মো. রবিউল বলেন, ‘সরকারের নির্ধারিত ভাড়া রাইদা নিচ্ছে না। সায়দাবাদ থেকে কমলাপুর নামলে ২০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। খিলগাঁও নামলেও ২০ টাকাই নিচ্ছে। জুরাইন থেকে রামপুরা ৩৫ টাকা নিচ্ছে। বাড্ডা, নতুন বাজার যেখানেই নামি ৩৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে।’

সায়েদাবাদ থেকে মালিবাগ পর্যন্ত দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া হয় ১২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু রাইদা নিচ্ছে ২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ৪ টাকা করে।

বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন কেন- এমন প্রশ্নে একটি বাসে ভাড়া কাটতে থাকা সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চেকে কোম্পানি থেকে যে ভাড়া নিচ্ছে, আমি সেই টাকাই ভাড়া কাটতেছি।’

ওয়েবিল তো অবৈধ- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোম্পানি যে সিস্টেম করছে, সেই সিস্টেমেই ভাড়া নিচ্ছি।’

অতীতের মতো এবারও বাসে ভাড়ার চার্ট টাঙায়নি রাইদা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, ‘চার্ট এখনো দেয় নাই আমাদের। দিলেই টানাব।’

এবার গণমাধ্যম এড়াচ্ছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা

গত নভেম্বরে বাস ভাড়া বাড়ানোর পর ভাড়ার নৈরাজ্য বিষয়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বক্তব্য পাওয়া ব্যাপার ছিল না। সে সময় ফোন করলে তারা সাড়া দিতেন। কিন্তু এবার সংস্থাটির চেয়ারম্যান, পরিচালক-কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত দুই দিনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে অন্তত ২০ বার কল করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। একবার তিনি এসএমএস করতে বললে অনিয়মের চিত্র জানিয়ে তার মন্তব্য জানতে চায় নিউজবাংলা। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি।

এরপর বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশনস) লোকমান হোসেন মোল্লার মোবাইল ফোনে কল করার পর যথারীতি তারও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে রাইদাসহ ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া গেল না।

যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা পরিবহনের বাস যদি ৮০টি হয়, একটি বাসকে জরিমানা করল, তাহলে বাকি ৭৯টি বাস তো নৈরাজ্য চালাচ্ছেই। অতীতে যে রকম লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়েছে, ওই ধরনের অভিযান দিয়ে এই অভিযোগ নিষ্পত্তি করা যাবে না। কোম্পানির প্রধানকে ধরে আনতে হবে। ধরে এনে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।’

নৈরাজ্য ঠেকাতে না পারলে বাড়তি ভাড়া স্থায়ী হয়ে যাবে উল্লেখ করে মোজাম্মেল বলেন, ‘তিন-চার দিন বেশি ভাড়া নিলে এটা নিয়মিত ভাড়ায় তৈরি হবে। সেই সুযোগটি করে দেয়া হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর