বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চলন্ত বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণ ‘রতনের নির্দেশে’

  •    
  • ৮ আগস্ট, ২০২২ ১৬:১৯

র‍্যাব জানায়, রতন হোসেন পেশায় গাড়ির হেলপার। তার বিরুদ্ধে আগেও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে নূরনবী, জীবন ও অন্য কয়েকজনকে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে সাভার পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি করেন। ওই ঘটনায় রতন গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দেড় বছর কারাগারে ছিলেন। এরপর জামিনে বের হয়ে ২০২০ সালে আবার নূরনবী, জীবন ও আউয়ালকে নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি অটোরিকশা ছিনতাই করেন।

টাঙ্গাইলে চলন্ত নৈশ কোচে ডাকাতির সময় এর মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনের কথায় এক নারী যাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়নের (র‍্যাব) মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশেষ বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

রতন হোসেনসহ ডাকাত চক্রের ১০ সদস্যকে রোববার গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত হলেও ধর্ষণের ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে রতনের পরিকল্পনায় ঘটে।’

টাঙ্গাইলে ডাকাতের কবলে পরা ঈগল এক্সপ্রেসের নৈশ কোচ। ফাইল ছবি

টাঙ্গাইলে গত ২ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের একটি বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক যাত্রী মধুপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ১০/১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১২ ও র‌্যাব-১৪ এর দল রোববার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারীসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে।

তারা হলেন মো. রতন হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, মো. সোহাগ মন্ডল, খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু, মো. বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস, মো. জীবন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. নাঈম সরকার, রাসেল তালুকদার ও মো. আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান।

তাদের কাছ থেকে ২০টি মোবাইল ফোন, দুটি রুপার চুড়ি, ১৪টি সিমকার্ড ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি ক্ষুর উদ্ধার করা হয়।

রতন হোসেন এই ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী বলে জানান খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘রতন ঘটনার ৩ দিন আগে তার সহযোগী রাজাকে বাস ডাকাতির প্রস্তাব দিলে রাজা দলের অন্য সদস্যদের সংঘটিত করার কথা বলেন। পরে রতন তার অন্য সহযোগী মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে এবং মান্নান তার সহযোগী সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে এই ডাকাতির পরিকল্পনায় যুক্ত করে ১৩ জনের বড় একটি দল গঠন করেন।

‘ঘটনার দিন দুপুরে তারা ঠিক করে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী কোনো বাসে ডাকাতি করবেন। চক্রের সদস্যদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে প্রত্যেকের কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়। যাবতীয় খরচ রতন বহন করেন এবং টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ডাকাতিতে ব্যবহারের জন্য ৪টি চাকু, ২টি ধারালো কাঁচি ও একটি ক্ষুর কেনেন তিনি।’

এরপর রাতে রাজাসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সিরাজগঞ্জ মোড় এলাকায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি সিরাজগঞ্জ মোড়ে পৌঁছালে যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী তাতে ওঠেন। এরপর কিছু দুরে আরও দুই দফায় ডাকাতচক্রের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে ওঠেন।

র‌্যাব জানায়, বাসটিতে ২৪ জন সাধারণ যাত্রী থাকায় ডাকাত চক্রের অধিকাংশ সদস্য পিছনের দিকে বসেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা অতিক্রম করলে রতন তার দলের সদস্যদেরকে চাকু ও ধারালো কাঁচি দেন। আউয়াল ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যান এবং রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সিটের কাছে গিয়ে চালককে মারধর করেন। এরপর রতন বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন।

অন্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদেরকে হাত-মুখ বেঁধে ফেলেন। তারা যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেন এবং এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করেন।

র‌্যাব জানায়, টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় রতন গাড়ি চালনার সময় লুটের মালামাল ভাগাভাগি নিয়ে অন্যদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। ওই বাক বিতণ্ডার ফলে অসতর্কতায় রতন নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটি রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বালুর ঢিবির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এরপর ডাকাতদলের সবাই লুট করা মালামালসহ বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান।

সেখান থেকে অন্য বাসে করে ডাকাত চক্রের সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় যান। সেখান থেকে অটোরিকশায় মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের নিকটাত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে লুণ্ঠিত মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেন।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘এরপর ডাকাত রতন গাজীপুরের বোর্ড বাজারে, মান্নান, আলাউদ্দিন ও বাবু আলাদাভাবে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকায় যান। ডাকাত আসলাম, নাঈম, রাসেল প্রথমে নিজের এলাকায় ও পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকায়, জীবন কোনাবাড়ীতে, দীপু প্রথমে টাঙ্গাইলের পিরোজপুর গ্রামে ও পরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় যান। এছাড়া ডাকাত সোহাগ প্রথমে জিরানী বাজার ও পরে জামালপুর জেলায় এবং পুনরায় জিরানী বাজারে আত্মগোপন করেন।

র‍্যাব জানায়, রতন হোসেন পেশায় গাড়ির হেলপার। তার বিরুদ্ধে আগেও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে নূরনবী, জীবন ও অন্য কয়েকজনকে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে সাভার পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি করেন। ওই ঘটনায় রতন গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দেড় বছর কারাগারে ছিলেন। এরপর জামিনে বের হয়ে ২০২০ সালে আবার নূরনবী, জীবন ও আউয়ালকে নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি অটোরিকশা ছিনতাই করেন।

ওই ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রতন ও জীবন এক বছর জেল খাটেন। এরপর আবার জামিনে বের হয়ে রতন তার সিন্ডিকেট নিয়ে সাভার, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে আরও কয়েকটি ডাকাতি করেন।

জীবন পেশায় গাড়ির হেলপার। এই পেশার আড়ালে তিনি বেশ কয়েকটি পরিবহনে ডাকাতিতে অংশ নেন। সবশেষ ঈগল এক্সপ্রেসে ডাকাতিতে তিনি যাত্রীদের মালামাল লুটের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে ২০১৮ ও ২০২০ সালে দুটি ডাকাতির মামলায় কারাভোগ করেন জীবন।

মান্নান গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি ২০১৯ সালে আশুলিয়া থানায় একটি চুরির মামলায় কারাভোগ করেছেন। তার পরিকল্পনায় ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টসের কর্মী আলাউদ্দিন, সোহাগ, বাবু, দীপু, রাসেল, রায়হান, নাঈম ওই ডাকাতিতে অংশ নিতেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বাসে ধর্ষণ করার বিষয়টি তাদের পূর্বপরিকল্পনায় ছিল না। এটা রতন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে হয়েছে। তবে কী কারণে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন সে বিষয়ে রতন ও তার সহযোগীরা এখনও কোনো তথ্য দেননি।’

পুরো ঘটনায় ঈগল এক্সপ্রেসের চালক-হেলপার-সুপারভাইজার কেউ জড়িত নন বলে জানান তিনি।

তবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পরিবহন মালিক-চালক ও যাত্রীদের আরও সতর্ক হতে হবে বলেও জানান র‍্যাব মুখপাত্র।

এ বিভাগের আরো খবর