জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম না কমালে পরিণতি শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাচ্যূত রাজাপাকসে সরকারের মতো হতে পারে।
জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মানববন্ধনে এমনটি জানিয়েছেন দেশপ্রেম মঞ্চের ডা. শাহরিয়ার ইশতিয়াক।
সোমবার দুপুর ১২টায় সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
দেশপ্রেম মঞ্চের ডা শাহরিয়ার বলেন, ‘দেশে আজকে গণতন্ত্র নেই। সবাই জনগণকে বোকা বানাতে চায়। সচেতন নাগরিককে জেগে উঠতে হবে। রাজনৈতিক সচেতন হতে হবে।’
‘আমরা সরকারকে তিনদিন সময় দিচ্ছি। আপনারা পূর্বের জায়গায় ফিরে আসুন। জনগণ যখন মাঠে নেমে আসবে তখন বুঝবেন জনগণের শক্তি কি। সময় থাকতে সচেতন হোন। অন্যথায় আপনাদের রাজাপাকসের মতো অবস্থা হবে,’ যোগ করেন ডা. শাহরিয়ার ইশতিয়াক।
বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গত ১১ জুলাই পদত্যাগ করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে, মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ।
বিক্ষোভ দমাতে এপ্রিলের শুরুতে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় মে মাসে পদত্যাগ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে।
এ সময় আয়োজকরা তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম কমাতে হবে, এক পয়সাও গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানো যাবে না এবং গণপরিবহনে ভাড়ার নামে নৈরাজ্য বন্ধ করার পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর হাফ-পাস নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে অভিভাবকদের মধ্য থেকে আবুল কাশেম মজুমদার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের পাঁচ মৌলিক অধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রপ্রধানের। আজকে মানুষ এসব মৌলিক অধিকার উপভোগে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াত করে। মানুষের আয় এবং ব্যয়ের সমন্বয় যদি না হয় তাহলে সাধারণ জনগণ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার হঠাৎ করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা হঠকারী সিদ্ধান্ত।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের জন্যই সরকার। সরকার যদি জনগণের ভালো মন্দের চিন্তা না করে তাহলে বুঝতে হবে জনগণ এবং সরকারের বিশাল একটা তফাৎ। এই সরকার শাসনের নামে শোষণ করছে।’
এই অভিভাবক বলেন, ‘এই যদি সরকারের অবস্থান হয় তাহলে নিরীহ মানুষ কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, জনজীবনের চিন্তা করে আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন। ভুল থেকে ফিরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। অন্যথায় অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কী কী করতে হবে সেটা জনগণ ভালো করেই জানে।’
ডা. শাহরিয়ার ইশতিয়াক আরও বলেন, ‘বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম বৃদ্ধি হয়েছে সেদিন বাংলাদেশেও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ অথচ বিশ্ববাজারে যেদিন কমতে শুরু করেছে সেদিন এই সরকার ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। কারণ তাদের ঋণ লাগবে। একদিকে তারা রিজার্ভ পর্যাপ্ত বলছে অন্যদিকে বলছে সংকট। এর মাধ্যমে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’
এই বক্তা বলেন, ‘আমাদের ত খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে। ৫০ শতাংশ যদি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় এটির কারণে সব সেক্টরে দাম বাড়বে। তাহলে আমরা চলবো কীভাবে? ৫০ শতাংশ ত আমাদের বেতন বাড়বে না। জনগণের কোন চিন্তাই এই সরকার করছে না।