জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত গণ-অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে একদল শিক্ষার্থী।
জ্বালানির দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক দাবি করে এর প্রতিবাদে ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা’ ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষার্থীদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয় শনিবার রাত ৯টায়। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪০ ঘণ্টার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
গত শনিবার রাত ৯টা থেকে শিক্ষার্থীদের এই অংশটি শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে তাদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার শিক্ষার্থীদের এই অংশটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিলে তারাও পুলিশের হামলার শিকার হয়।
শুক্রবার রাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ডিজেল ও কেরোসিনে বাড়ানো হয় লিটারে ৩৪ টাকা। অকটেন প্রতি লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। পেট্রলের দাম বাড়ানো হয় ৪৪ টাকা।
এই প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক মহিদুল ইসলাম দাউদ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে। পাশাপাশি গতকাল থেকে আমাদের আরও একটি দাবি যুক্ত হয়েছে৷ সেটি হলো বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হওয়া পুলিশি হামলার আমরা বিচার চাই।’
অবস্থান কর্মসূচি থেকে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধিরও প্রতিবাদ জানানো হয়। এ সময় তাদের হাতে ‘তেল ডিজেলের দাম কমাও কৃষক বাঁচাও’, ‘তেলের দাম কমিয়ে দে’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
অবস্থান কর্মসূচিতে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক রুহুল আমিন বলেন, ‘মধ্যরাতে সরকার যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, সেটির প্রতিবাদেই আমাদের অবস্থান। আমাদের দাবি, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো যাবে না, বরং কমাতে হবে।’ এ ছাড়া গতকাল আমাদের ওপর যেসব পুলিশ হামলা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম আপন বলেন, ‘স্বাধীনতার পর এমন কোনো ইতিহাস নেই, এত পরিমাণ তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ছে।’
তেলের এই দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক মন্তব্য করে তা প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেল। আমরা দেখলাম গত বছরও যখন দাম বেড়েছে, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। কোনো জিনিসের দাম কমেনি।’
তিনি বলেন, ‘আজকে প্রতিটি জিনিসের দাম নাগালের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানির দাম বাড়ানো মূলত আত্মহত্যা। আমরা চাই রাষ্ট্র অন্তত সেবা খাতগুলোতে ভর্তুকি বহাল রাখুক। আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না।’
এর আগে গত শনিবার শিক্ষার্থীদের এই অংশটি শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তবে এ সময় যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়নি। পরে সন্ধ্যার সময় তারা শাহবাগ মোড় থেকে সরে এসে রাত ৯টা থেকে জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
এর আগে ৫ আগস্ট শুক্রবার রাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়। এক লাফে ডিজেল ও কেরোসিনে বাড়ানো হয় লিটারে ৩৪ টাকা। নতুন করে ডিজেল ও কেরোসিন এখন ভোক্তাকে কিনতে হবে ১১৪ টাকা করে।
অন্যদিকে অকটেনে প্রতি লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন ১৩৫ এবং পেট্রল ৪৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা লিটার। এই হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ আর অকটেন-পেট্রলে বেড়েছে ৫১ শতাংশ।
বৈশ্বিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়া এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। জ্বালানি তেলের নতুন এই দাম কার্যকর হবে শুক্রবার রাতেই।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এক প্রজ্ঞাপন দিয়ে নতুন দাম কার্যকরের কথা জানায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিলের পর গত বছরের ৩ নভেম্বর দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে সরকার। সে সময় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয় লিটারে ১৫ টাকা করে। তখন দাম বেড়ে হয় ৮০ টাকা লিটার।