জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী নাকি তথ্য সচিব- কার কথা ঠিক, সে প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনামন্ত্রী বলছেন, আইএমএফের শর্ত মানার জন্য এই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। আর এদিকে তথ্য সচিব বলছেন, এটা হচ্ছে আমাদের পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান বাঁচানোর জন্যে।’
লোকসান কেমনে হলো, সেই প্রশ্ন রেখে বিএনপি নেতা বলেন, ‘যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল, তখন তুমি আগের দামেই তেল বিক্রি করেছ। এবং তাদের লাভ ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এখন আবার যখন তেলের দাম বাড়াল, তখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।’
রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ড্যাব) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় গিয়ে এসব কথা বলেন বিএনপি নেতা।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা ও অকটেনের নাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ডিজেলে লিটারে ৪২ টাকার বেশি লোকসান হতো। দাম বাড়ানোর পর এখনও ৮ টাকার বেশি লোকসান হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর প্রতি ব্যারেল ডিজেল ১৭০ ডলার পর্যন্ত কিনতে হয়েছে। এখন তা ১৩০ থেকে ডলারের মধ্যে।
আর অশোধিত তেল একপর্যায়ে ১৪০ ডলার হয়ে গেলেও এখন তা ৯০ ডলারের ঘরে থিতু হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, তারা বিশ্ববাজারের প্রতি নজর রাখছেন। সেখানে তেলের দাম কমে আসছে। সরকার কেনাও শুরু করেছে। সেই তেল দেশে এলেই দাম কমবে।
বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশে কমবে, এ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।
২০১৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বিপিসি যে মুনাফা করেছে, সেটি নিয়ে সরকার জ্বালানি খাতের অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ফখরুল বলেন, ‘এই প্রফিট কোথায় গিয়েছে শুনুন। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা সরকার নিয়ে নিয়েছে। কারণ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রফিট সে তার অ্যাকাউন্টে রাখতে পারবে না, সেটা সরকার ইচ্ছে করলেই নিয়ে নিতে পারে।’
বিএনপির মহাসচিব উল্লেখ করেন সারের দামের কথাও। সম্প্রতি কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে এই দাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় ৩০০ টাকায় বস্তা পাওয়া যেত। কয়েক দিনে এটি ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইটার দাম বাড়ানো হলে কী হবে? ১ হাজার ৩০০ টাকায় বস্তা কিনতে হবে।‘এখন ১ হাজার ৩০০ টাকায় সার কিনে যে ধান উৎপাদন করবে, ফসল উৎপাদন করবে, তার মূল্যই সে পাবে না। অন্যদিকে আপনি জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছেন। সে যে সেচ করবে, সেটা সে পারবে না। ফলে সে কৃষিকাজ থেকে দূরে সরে যাবে। ফলে খাদ্য নিশ্চয়তা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশটাকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে বলেও মনে করেন ফখরুল। বলেন, ‘তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় দেশকে শাসন করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই সে হয়ে যায় রাষ্ট্রদ্রোহী বা দেশদ্রোহী। অসংখ্য মামলা এবং মামলা চলছেই।’
তিনি বলেন, ‘৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা। তার কোনো ভিত্তিই নেই। যে টাকার জন্য মামলা সেটা সেখানেই আছে। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে তার একটা বিচার হয় নাই।’