বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে শনিবার ভোর থেকেই রাজধানীতে কমতে শুরু করেছে বাসের সংখ্যা। এতে বড় ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসসহ বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।
অফিসগামী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তারা বাস পাচ্ছেন না। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল বা রিকশায় চড়তে গেলে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া।
সকাল থেকে রাজধানীর বনশ্রী, রামপুরা, বাড্ডা, মগবাজার এলাকা ঘুরে বাস সংকটের এ চিত্র দেখা যায়।
বনশ্রী থেকে শ্যামলীতে গিয়ে অফিস করেন বাদল সরকার। প্রতিদিন সাড়ে আটটায় রাস্তায় নেমে ৫ মিনিটের মধ্যে বাসে উঠতে পারেন। সকাল সকাল সিটও খালি থাকে, কিন্তু আজ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়েও বাসে উঠতে পারেননি তিনি।
ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো মেরাদিয়া বাজার, বনশ্রী, রামপুরা ব্রিজ হয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করে। এই পথের বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাস সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। অন্য কোম্পানির বাসগুলো সংখ্যায় কম।
বাদল সরকার বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ছে। এ কারণে নাকি বাস বন্ধ করে দিছে মালিকরা। সব ভাড়া বাড়ানোর ধান্ধা।
‘৪৫ মিনিট ধরে কোনো বাসে উঠতে পারছি না। একটা-দুইটা বাস আছে, কিন্তু সব যাত্রীবোঝাই।’
বাদল সরকারের মতো অনেক যাত্রীকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। রামপুরা ব্রিজ এলাকায় শত শত মানুষকে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বেশি দুর্ভোগে পড়েন নারীরা।
রামপুরা ব্রিজে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কোনো বাসে উঠতে পারেননি নাজমুন নাহার নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী।
তিনি বলেন, ‘আজকে ভিক্টর, তুরাগ বাস রাস্তায় একদম কম। দুই-একটা আসছে। তাতে আর ওঠার উপায় নেই।’
বাসে না উঠতে পেরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নাজমুন, কিন্তু অটোরিকশায় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হয় বলে জানান তিনি।
‘এমনিতে রাস্তায় বাস কম। এর মধ্যে সিএনজি, মোটরসাইকেলেও ভাড়া বেড়ে গেছে। কীভাবে অফিস যাব জানি না’, বলেন নাজমুন নাহার।
বনশ্রী থেকে মোহাম্মদপুরগামী বাস তরঙ্গ ও স্বাধীন পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়। তাদের চালক ও সহকারীরা জানিয়েছেন, তেলের দাম বাড়ার কারণে বাস ভাড়া বাড়ানো লাগবে। না হলে চলবে না। বাস বন্ধ রাখার বিষয়ে তারা মালিকদের কাছ থেকে নির্দেশনা পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনশ্রী থেকে মোহাম্মদপুরগামী একটি পরিবহনের চালক বলেন, ‘অনেক কোম্পানির মালিক বাস নামাইতে না করছে বলে শুনছি। ভাড়া বাড়লে বাস নামাবে। এটা সরকারকে ভাড়া বাড়ানোর জন্য চাপ দেয়ার কৌশল।’
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকাতেও সকাল থেকে গণপরিবহন কম চলাচল করছে। মিরপুর সড়কে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি তাদের বাস বন্ধ রেখেছে।
মিরপুর সড়কে চলাচল করে বিকাশ পরিবহন। তাদের বাস সড়কে চলছে, কিন্তু তেলের দাম বাড়ায় লস দিয়ে বাস চালাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থা করোনার সময় থেকেই খারাপ। এখন তেলের দাম বাড়ছে। বাস ভাড়া তো বাড়ে নাই। আমরা আজকে লস দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছি। অনেকে বন্ধ রাখার কথা বলেছে, বন্ধ রেখেছেও।
‘আমাদের গাড়িগুলো আজকে চলছে, কিন্তু কয়দিন এভাবে লস দিয়ে চালাতে পারব, জানি না।’
তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে বাস ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সোহরাব। তার ভাষ্য, ‘আমাদের যে হারে খরচ বাড়ছে, সে হারে ভাড়া বাড়েনি। বাড়তি খরচে গাড়ি চালিয়ে আবার আমাদের নিতে হচ্ছে হাফ ভাড়া। সবকিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে দিলে তো ব্যবসা করতে পারব না। লাভ তো দূরের কথা, খরচই উঠবে না।’
জ্বালানির দাম বাড়ানোর সরকারি ঘোষণার পর শুক্রবার রাত থেকেই রাজধানীতে গণপরিবহন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন রামপুরা জোনে দায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট এনামুল হক শিপন।
তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে অনেক যাত্রী অপেক্ষা করেও বাস পাচ্ছেন না। বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাস দেখা যাচ্ছে না। আবার কিছু কোম্পানির বাস চলছে, তবে সংখ্যায় কম।’
প্রেক্ষাপট
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের শুক্রবার সন্ধ্যার প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে।এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।শতকরা হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ৫১ শতাংশ।জ্বালানি তেলের বর্ধিত এ দাম কার্যকর হয় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। এর আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি তেল নিতে পেট্রল পাম্পে ভিড় জমান গাড়িচালকরা, তবে অনেক জায়গায় বন্ধ করে দেয়া হয় পেট্রল পাম্প।