খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের আনোয়ার হোসেন। চলতি আমন মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে চারা রোপণ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নষ্ট হতে বসেছে উঠতি আমনের চারা।
তিনি বলেন, ‘কয়েক বিঘা জমি নদীতে গেছে। আবাদ নিয়ে অনেক শঙ্কায় থাকতে হয়। কখন যে পানি বাড়ে। পানি বাড়লে ফসল শেষ।
‘১০-১৫ দিন হলো চারা রোপণের। কিন্তু পানিতে ডুবে থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সেগুলো। চারাগুলো আর স্বাভাবিক হবে না।’
একই এলাকার শারমিন নাহার। চার বিঘা জমিতে তিনিও রোপণ করেছেন আমন চারা। কিন্তু সর্বনাশ হয়েছে তিস্তার পানি বাড়ায়।
আনোয়ার হোসেন কিংবা শারমিন নাহারেরই শুধু নয়, খন্দকার আলম, আয়নাল হকেরও ফসল নষ্ট করেছে তিস্তার পানি।
সরেজমিন দেখা যায়, তিস্তাপারের জমিগুলোতে এখনও জমে রয়েছে পানি। এই পানিতে তলিয়ে রয়েছে আমন চারা।
ময়লা জমে চারা হয়েছে ধূসর বর্ণ। এসব চারার বেড়ে ওঠা নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা।
সম্প্রতি উজানের ঢলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেলে প্লাবিত হয় পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানি, নাউতারাসহ ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসহ নদীবেষ্টিত আশপাশ এলাকা।
তিস্তার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তিস্তাপারে অনেক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করি। কখন পানি আসবে বলা মুশকিল। পানি বাড়লে বিপদ, ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করে আনারই সময় পাওয়া যায় না।’
আব্দুর রাশেদ নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘উজানের পানির কারণে হামরা (আমরা) ডুবি যাই। পানির যখন বেশি হয়, ঘরবাড়ি ভাঙি নিয়া যায়। কোনো রকমে গরু-ছাগল নিয়ে বাঁধোত ঠাঁই নিই।’
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘আমার এলাকার শত শত কৃষকের আমন চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বিপাকে রয়েছেন।
‘খড়িবাড়ি এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বালুর বাঁধটি ধসে গেছে কিছু অংশ। সেটিকে রক্ষা করা দরকার।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয় যৌথ নদী কমিশন চুক্তি অনুযায়ী। পানি বৃদ্ধির ফলে নদীসংলগ্ন কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। কিন্তু আমরা চেষ্টা করি যাতে তারা দ্রুত মেসেজটি পান।’
তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকা বাঁধ সংস্কার বা মেরামত প্রয়োজন, সেগুলো চিহ্নিত করে আমরা প্রকল্প নেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
জানতে চাইলে ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘তিস্তা এলাকায় ১০ হেক্টর জমির মতো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জমির আমন চারা পানিতে তলিয়ে থাকায় ধূসর বর্ণের হয়েছে। আবারও পানি হলে পরিষ্কার হবে আর যদি না হয় তাহলে স্প্রে করতে হবে। তাহলে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে চারাগুলো।’
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের চারা ও সরকারি সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।