বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পিনাক-৬ ট্র্যাজেডি: ৭ বছর পরও যার রক্তক্ষরণ অন্তরে

  •    
  • ৪ আগস্ট, ২০২২ ১৫:২৩

দুই মেয়ে আর এক ভাগ্নিকে হারানো নুর ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গেলে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। পুরো পদ্মা নদীই যেন আমার মেয়েদের কবরস্থান।’

৪ আগস্ট ২০১৪। এ দিনেই পদ্মা নদীতে স্মরণকালের ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনায় প্রায় আড়াই শ যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামে একটি লঞ্চ। ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ থেকে যান আরও ৬৪ জন।

বৃহস্পতিবার ওই দুর্ঘটনার সাত বছর পূর্ণ হলো। এতদিন পরও আক্ষেপের অন্ত নেই স্বজন হারাদের। কদিন আগে চালু হওয়া পদ্মা সেতুর আনন্দও তাদের অন্তরের রক্তক্ষরণ থামাতে পারেনি।

সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও ভয়ে গা শিউরে ওঠে কালকিনি উপজেলার পশ্চিম কমলাপুর গ্রামের সবুজ কাজীর। শুধু তার পরিবারেরই ৬ জন সেদিন ঢাকায় যাচ্ছিল। এর মধ্যে বেঁচে ফিরেছিল মাত্র দুজন। মা আর শ্যালকের মরদেহ উদ্ধার হলেও আজও স্ত্রী আন সন্তানকে খুঁজে পাননি সবুজ।

পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবিতে কাজী সবুজের পরিবারের চারজন প্রাণ হারান। তাদের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। ছবি: নিউজবাংলা

কাজী সবুজ বলেন, ‘পদ্মা আমার পরিবারের ৪ জনকে কেড়ে নিয়েছে। নদীর ওপর সেতু হওয়ায় এখন আর সেই ভয় নেই। তবে দেশের অন্যান্য নদীতে এখনও নৌযান চলে। আমার একটাই দাবি, আর যেন কাউকে স্বজনহারা হতে না হয়। সরকার পদ্মা সেতু করেছে, এতে আমরা খুশি। তবে নৌযান দুঘর্টনা কমলে আরও বেশি খুশি হবো।’

শিবচর উপজেলার গুয়াকান্দি এলাকার নুর ইসলামও সেদিন তার দুই মেয়ে আর এক ভাগ্নিকে নিয়ে পিনাক-৬ লঞ্চে চড়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর নুর ইসলাম বেঁচে ফিরলেও তার পরিবারের মেধাবী তিন কন্যাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

নুর ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গেলে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। পুরো পদ্মা নদীই যেন আমার মেয়েদের কবরস্থান।’

জানা যায়, দুর্ঘটনার সেই দিনটিতে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছিল পিনাক-৬ লঞ্চটি। ধারণক্ষমতা ১০০ জনের হলেও সেদিন লঞ্চটিতে যাত্রী ছিল প্রায় আড়াই শ।

সেদিন ঢাকা যেতে পিনাক-৬ এ উঠেছিলেন এই তিন ছাত্রী। সেলফি তুলে ফেসবুকে শেয়ারের কিছু পরেই পদ্মায় ডুবে মারা যান তারা। ছবি: সংগৃহীত

যাত্রী নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দেয়ার সময় লৌহজং চ্যানেল থেকে কিছুটা দূরেই ডুবে যায় পিনাক-৬। এতে উদ্ধার হওয়া ৪৯টি মরদেহের মধ্যে ২১ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে এত দিন পরও অজ্ঞাতনামা মৃতদেহগুলোর খোঁজ নিতে কেউ আসেনি।

শিবচর পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, ‘সে সময় ২১ জনের ডিএনএ টেস্টের নমুনা রাখা হয়। কিন্তু এখনও কেউ লাশগুলো শনাক্ত করতে আসেনি। যদি কেউ ডিএনএ টেস্টের সঙ্গে মিলিয়ে মরদেহ নিতে চায়, তাহলে তাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে।’

পদ্মা সেতু চালুর ফলে আর কোনো নৌ-দুঘটর্নার আশঙ্কা নেই- বলেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন।

পিনাক-৬ ট্র্যাজেডির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এ ঘটনায় স্বজনহারা হয়েছে, পরিবারের একমাত্র সক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছে, তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।’

ওই দুর্ঘটনায় পিনাক-৬ লঞ্চের মালিকসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও বর্তমানে তারা সবাই জামিনে রয়েছেন।

এ বিভাগের আরো খবর