প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৈঠক শেষে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় এ ঘোষণা দেন তারা। এ সময় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও শুরু করেন তারা। এ ছাড়া, দাবি আদায়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট ডাকলেও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ দিকে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্চিত ও মেডিক্যাল কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার কতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কলেজ প্রশাসনের মামলায় সোমবার রাতে আটক ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিদ হাসান রাব্বি ও স্থানীয় বাসিন্দা এহসান আহম্মদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাত থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাতেই কর্মবিরতির ডাক দিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন এ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সোমবার ভোর রাত ৩টায় পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন তারা। নির্ধারিত সময় সীমা শেষে মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় কলেজের মিলনায়তনে কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীরা।
বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। কলেজ ও হাসপাতহাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে প্রশাসনের কর্তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
তবে এই আহবানে সাড়া না দিয়ে হামলাকারী সবাইকে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে বৈঠক থেকে চলে আসেন আন্দোলনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘হামলাকারী সকল আসামি গ্রেপ্তার এবং শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাবে। সেবা দিতে এসে আমরা হামলা ও হয়রানির শিকার হতে রাজী নই।’
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত হাসান সানি।
ইন্টার্নরা ধর্মঘটের ডাক দিলেও হাসপাতালের সেবা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একমত। তাদের দাবি পূরণে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে, সব দাবি পূরণে কিছুটা সময় লাগবে। আমরা তাদের কাছে এই সময়টুকু চেয়েছি।’
এখনও আন্দোলনকারীদের বুঝানোর চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার রাত ৮টার দিকে ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হন মেডিক্যাল কলেজের দুই শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
হামলায় আহতরা হলেন শিক্ষার্থী রুদ্র নাথ ও নাইমুর রহমান ইমন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী শাহ অসিম ক্যানেডি বলেন, ‘রোববার এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর দুই স্বজন খারাপ ব্যবহার করে। আমরা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেই।’
‘এ ঘটনার জেরে সোমবার রাত ৮টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে বহিরাগতরা আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এতে দুজন গুরুতর আহত হন। এর আগেও অনেকবার এমন ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।’
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় হাসপাতাল প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় কলেজ প্রশাসন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে।’