রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রতিবাদ ও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি এবার আখাউড়া রেলস্টেশন গিয়ে ভাইরাল হয়েছেন।
সেখানে এক যাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিকিটের জন্য রাখা বাড়তি টাকা ফেরত নিয়ে দেন জনপ্রিয় রনি। ওই ঘটনার ভিডিও দিনভর ভাইরাল ফেসবুকে।
তবে ওই যাত্রীর অভিযোগ কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত নিয়ে যাননি, সেখানেই মীমাংসা করেছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন রনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে রোববার গভীর রাতে হাজির হন এই তরুণ।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, রেলের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। পথে আখাউড়া স্টেশনে ছিল যাত্রাবিরতি।
রনি বলেন, ‘সেখানে এক যাত্রী কয়েকজনের কাছে বলতে থাকেন যে তার কাছ থেকে ৭৫ টাকার টিকিটের দাম ১২০ টাকা রাখা হয়েছে। ওই যাত্রীকে কয়েকজন আমার কাছে নিয়ে আসে। সব শুনে আমি তাকে নিয়ে কাউন্টারে যাই। সেখানে যিনি ছিলেন বুকিং মাস্টার দোষ স্বীকার করেননি।
‘কথাবার্তার একপর্যায়ে তার মিথ্যা বের হয়ে আসতে থাকে। একপর্যায় তিনি ওই যাত্রীর থেকে নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরতও দেন। নাম জানতে চাইলে না বলে কাউন্টার থেকে বের হয়ে যান। বের হয়ে আমাকে আবার বলতে থাকেন যে দেখে নেবেন। আরেকজন বয়স্ক ব্যক্তিকে গিয়ে কিছু একটা বললেন। সেই ব্যক্তিও আমাকে বলে দেখে নেবেন।’
ভাইরাল ভিডিও দেখে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্টারের ওই ব্যক্তি হলেন বুকিং সহকারী আক্তার হোসেন। ভিডিওতে দেখা গেছে তিনি রনি ও ওই যাত্রীর তোলা অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কীভাবে নিশ্চিত হলেন জানতে চাইলে রনি বলেন, ‘ওইখানে অনেক যাত্রীই এই অভিযোগ তুলেছে যে কাউন্টারে টিকিটের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা রাখা হয়। তা ছাড়া ওই যাত্রীকে নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে সব জানতে চাইলে অস্বীকার করলেও পরে কাউন্টারের ওই ব্যক্তির কথায় অসামঞ্জস্যতা বের হয়ে আসে।
‘এরপর তিনি তো টাকা ফেরত দেন। সহজ-সরল পেয়ে যাত্রীর কাছ থেকে ওই বুকিং মাস্টার এভাবে টাকা নেন।’
এ বিষয়ে সেখানকার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে রনি জানান, সেখানেই মীমাংসা হয়ে যাওয়ায় কোনো অভিযোগ দেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বুকিং সহকারী আক্তার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করিনি। এটার উত্তর আমি কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি।’
এদিকে সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসে থাকা নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন রনি।
তিনি সেখানে বলেন, ‘এটা আসলে দুর্ঘটনা নয়, দুর্ঘটনা বলতে পারি না। এটা একটা হত্যা। আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে, ঠিক আছে... এটা একটা হত্যা। তাদের সিস্টেমে ফেলে মানুষকে খুন করছে, হত্যা করছে।
‘কে করল? কাদের দায়? কাদের অবহেলায় এটা হয়েছে? দায়িত্বপ্রাপ্তরা কী করেছে? যারা বড় কর্মকর্তা, তারা জানার পরও অবৈধ ক্রসিং বন্ধ করেনি, সিগন্যালের ব্যবস্থা করেনি, গেটম্যান রাখেনি। এই প্রশ্নের উত্তরগুলো কে দেবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমি আমার সর্বোচ্চ পর্যন্ত লড়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনও ব্রিটিশ আইন দ্বারা পরিচালিত। ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী কেউ যদি রেলের নিচে চাপা পড়ে, সে-ই দোষী। এর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায় না। এটা কি জোক?... ব্রিটিশরা চলে গেছে অনেক আগে, কিন্তু তাদের এই জোকগুলো রেখে গেছে।’