সড়ক দুর্ঘটনায় খ্যাতিমান চিত্রপরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়ে জেলখানায় মারা যাওয়া বাসচালক জামির হোসেনকে নিয়ে ডকুফিল্ম তৈরির কাজ চলছে।
দুর্ঘটনার জন্য বিচারিক আদালতে জামির দোষী সাব্যস্ত হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সামছুল হকের একটি অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে, বাসচালক জামির ছিলেন ‘নির্দোষ’।
সরেজমিন অনুসন্ধান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ড. সামছুল হক বলছেন, সেদিন রাস্তায় সঠিক লেনেই ছিল জামিরের বাস। একটি বাঁকের মুখে তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসার কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা জামিরের বাসটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
ড. সামছুল হকের অনুসন্ধান নিয়ে গত বছরের ১৩ আগস্ট ‘তারেক-মিশুকের মৃত্যুতে কতটা দায়ী বাসচালক?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ডকুফিল্মটি নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্মাতা মোহাম্মদ সেলিম।
সেলিমের আশা, চলতি মাসেই ডকুফিল্মটি প্রদর্শন করা যাবে।
বাসচালক জামির হোসেনকে নিয়ে ডকুফিল্মের শ্যুটিং চলছে
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিউজবাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই আমাদের মনে হয়েছে জামির হোসেনের মৃত্যু আসলে একটি সামাজিক বা মিডিয়া ট্রায়ালের ফল। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য বিষয়টি মানুষের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আমরা অধ্যাপক ড. সামছুল হক স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। স্যার বক্তব্য দিতে রাজি হলে ডকুফিল্মটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে ইনডোর শুটিং শেষ হয়েছে। এখন বাইরের কিছু শুটিংয়ের কাজ করছি। সব কাজ শেষ করে ১৩ আগস্ট বা এই মাসের মধ্যে ডকুফিল্মটি প্রদর্শনের উপযোগী করতে পারব।’
জামির হোসেনকে নিয়ে ডকুফিল্মটির নাম দেয়া হচ্ছে ‘সোশ্যাল ক্রসফায়ার’।
সারা দেশকে নাড়া দেয়া ২০১১ সালে ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে ওই সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর ছাড়াও তাদের মাইক্রোবাসচালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন মারা যান। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ আহত হন পাঁচজন।
দুর্ঘটনার জন্য জামির হোসেনকে দায়ী করে বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন সাজা দেয়ার পাশাপাশি আরেকটি মামলায় তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে বিবাদীদের আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
এ ছাড়া মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে করা ক্ষতিপূরণের আরেকটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল নিষ্পত্তির আগেই কারাবন্দি অবস্থায় ২০২০ সালের ১ আগস্ট মারা যান জামির। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময়ে ঈদের দিন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, পরে রাজধানীর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।