দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টের রায়ে কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের জামিন মেলেনি। জামিন আবেদনটি নথিভুক্ত রেখে আপিল শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন ঠিক করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
সোমবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে সেলিমের পক্ষে শুনানি করেন সাঈদ আহমেদ রাজা। মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
নিউজবাংলাকে খুরশীদ বলেন, ‘দুর্নীতি মামলায় হাজি মো. সেলিম হাইকোর্ট থেকে ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তিনি একটা লিভ টু আপিল করেছেন, তার সঙ্গে তিনি জামিনেরও দরখাস্ত করেছেন।
‘ওই জামিন আবেদনের উপর আজকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিনের দরখাস্তটি নথিভুক্ত করে রাখে। আর লিভ টু আপিল শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেয়।’
১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৪ মে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল এবং জামিন চেয়ে আবেদন করেন হাজি সেলিম। পরে চেম্বার আদালত জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।
দুদকের করা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় দণ্ডের পর হাজি সেলিম গত ২২ মে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এ আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। বিচারক তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
শুরুতে কারাগারে গেলেও সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়েছে।চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলার ৬৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। রায়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম দণ্ড দেয়া হয়।
অন্যদিকে দুদক আইনে (২৬ এর ২ ধারা) করা মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিচারিক আদালত তাকে তিন বছরের দণ্ড দিয়েছিল। সেই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয় হাইকোর্ট।
হাজি সেলিম ও তার স্ত্রী গুলশান আরার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। পরের বছরের ২৭ এপ্রিল বিচারিক আদালত ওই মামলার রায় ঘোষণা করে। দুটি অভিযোগে আদালত হাজি সেলিমকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। রায়ে উল্লেখ করা হয়, উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে।
অন্যদিকে গুলশান আরাকে তিন বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় একইসঙ্গে অবৈধভাবে তাদের অর্জিত প্রায় ২৭ কোটি টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেয়া হয়।
রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাজি সেলিম এবং ২০১৩ সালে তার স্ত্রী আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগ সাজা বাতিল করে দেয়।
দুদক সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করে। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাইকোর্টে নতুন করে শুনানির আদেশ দেয়া হয়।
গুলশান আরা ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।