জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে হাতে হারিকেন নিয়ে বিএনপি কর্মীদের বিক্ষোভ দেখে নেতাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা হাতে হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে। তাদের হাতে হারিকেনই ধরায় দিতে হবে। তাদের সবার হাতে হারিকেন ধরাই দেন আর দেশের মানুষকে আমরা নিরাপত্তা দেব, দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে আমরা সেই ব্যবস্থা নেব, সে কাজটা করব।’
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্মরণে সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনের পূর্বে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন ভার্চুয়ালি।
বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত জুলাই থেকে সূচি তৈরি করে লোডশেডিং করছে। বর্তমান সরকারের এক যুগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির পাশাপাশি শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধায় আনার পর এই উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনায় মুখর বিএনপি।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্মরণে সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনের আগে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে যুক্ত হন ভার্চুয়ালি। ছবি: পিআইডি
দলটির শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের করুণ পরিস্থিতির কারণে এখনও বিএনপিকে আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ। তবে এবার লোডশেডিং শুরু করার পর আওয়ামী লীগকে পাল্টা আক্রমণ করছে দলটি। বলছে, সরকার বিদ্যুতের উন্নতির যে দাবি করছে, সেটি মিথ্যা।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট থেকে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছিল।
‘আমরা ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি। ২০০১ সালে যখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেই, তখন ২৬ লাখ টন উদ্বৃত্ত রেখে এসেছিলাম। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি আবার সেখানে দেখি ২১ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি। অর্থাৎ দেশকে খাদ্য ঘাটতি রেখে মানুষকে ভিক্ষুক জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচয় করানো এবং ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে আসা। এটাও একটা ব্যবসা। খাদ্য কিনবে ব্যবসা করবে এবং কমিশন খাবে এটাই ছিল বিএনপির নীতি।’
বিএনপি অস্ত্র চোরাকারবারিদের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেন সরকার প্রধান। বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে এ সমস্ত কাজ করানো হতো। ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়েছে। মাত্র একটা চালান ধরা পড়েছে। এ রকম কত চালান এ দেশে আসছে গেছে!
‘দেশের মানুষের নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, পাঁচবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশে এক নম্বরে ছিল।
‘দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুনখারাবি… প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া, তাদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা, শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিবেশ ধ্বংস করা এটাই ছিল বিএনপির চরিত্র।’
তার প্রথম শাসনামল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘এটা তো একটা স্বর্ণযুগ ছিল মানুষের জন্য। ২০০১ আমাদের আসতে দেয়নি ক্ষমতায়। সেটাও একটা চক্রান্ত ছিল। আমরা গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি আসতে পারিনি; এটা হলো বাস্তবতা।
সদ্য শেষ হওয়া জনশুমারির তথ্যের নির্ভুলতা নিয়ে তোলা প্রশ্নেরও জবাব দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে, সেটাও আবার কারও হিসাবে পছন্দ হচ্ছে না। তাদের জিজ্ঞেস করব, হিসাবটা পছন্দ হয় না কেন? তাহলে নিজেরাই সন্তান জন্মাতে থাকুক বা জনসংখ্যা বাড়াতে থাকুক। যাদের পছন্দ না, তারা সেটা করুক আমরা খাবার দেব, কোনো আপত্তি নেই। আমরা চাই প্রত্যেকটা পরিবার যেন সুখি পরিবার হয়, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে খুনিরা দেশ ও জাতিকে কী দিতে পেরেছে, সেই প্রশ্ন ও রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন; যাতে এ দেশে ক্ষুধা দারিদ্র্য না থাকে, বাংলাদেশ যাতে ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে পরিচিত না হয়, সে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতক খুনি চক্র বঙ্গবন্ধুকে এ দেশের মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। দেশকে সন্ত্রাসের জনপদের পরিণত করেছিল। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন আর জঙ্গিবাদের আখড়া বানিয়েছিল। লুটপাট অর্থ পাচার করেছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করেছিল।
‘বঙ্গবন্ধুর রক্ত নিয়ে এ দেশের মানুষের নয়, শুধু খুনিদের লাভ হয়েছিল।’
২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় শোক দিবসের আলোচনা ও রক্তদান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমও এ সময় বক্তব্য রাখেন।