অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিট বিক্রির অংশীদার প্রতিষ্ঠান ‘সহজ’কে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সে জরিমানার আদেশ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির লিটনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজীব উল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
জরিমানার আদেশ স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করে হাইকোর্ট।
রেলের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ছয় দফা দাবিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টানা ১২ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে প্রতিকার চেয়ে সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে শুনানি শেষে সহজকে জরিমানা করা হয়।
পরে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী ভোক্তার প্রতি সহজের অবহেলা পাওয়া গেছে। সহজের এই অবহেলা প্রমাণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
ওই জরিমানার আদেশ চ্যালেঞ্জ করে গত ২৬ জুলাই হাইকোর্টে রিট করে সহজ ডটকম। রোববার ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।
কী ছিল রনির অভিযোগ
মহিউদ্দিন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গত এপ্রিলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন।
গত জুনে রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ৭ জুলাই থেকে রনি ছয় দফা দাবিতে কমলাপুরে টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান শুরু করেন।
রনি নিউজবাংলাকে জানান, ১৩ জুন রেলের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন তিনি। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে তার পিন কোড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়।
এই শিক্ষার্থীর দাবি, টাকা কেটে নিলেও তিনি কোনো আসন পাননি। এমনকি টাকা নেয়ার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্টও দেয়া হয়নি।
রনির ভাষ্য, সেদিন তিনি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে সেখান থেকে তাকে ‘সিস্টেম ফেইল’ করার কথা বলা হয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে টাকা না পেলে আবার যেতে বলা হয়।
রনির অভিযোগ, ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন।
রনির কী কী দাবি
রনির দাবিগুলো হলো অনলাইনে টিকিট কেনায় সহজ ডটকমের যাত্রী হয়রানি বন্ধ করে তদন্ত সাপেক্ষে হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা, অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা, ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর করা, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করা এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার, বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
রেলের টিকিটকে কঠিন করেছে সহজ
প্রায় দুই বছর আগে রেলের আহ্বান করা দরপত্রে সিএনএসের পরিবর্তে টিকিট ব্যবস্থাপনার জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয় সহজ লিমিটেড। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রেল ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে সহজ ও রেলের চুক্তি হয়। আগামী পাঁচ বছরের জন্য ট্রেনের টিকিট বিক্রি করবে সহজ।
সিএনএস বিডির বিরুদ্ধে রেলের টিকিট বিক্রি নিয়ে নানা অনিয়ম ছিল, তবে সহজের রেলে যুক্ত হওয়া নিয়েই উঠে অনিয়মের অভিযোগ। আর শুরুতেই গোলমাল পাকিয়ে ফেলা সহজকর্মীদের বিরুদ্ধেই কালোবাজারে টিকিট বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় নিজেদের এক কর্মীকেই চাকরিচ্যুত করেছে সংস্থাটি।
শুরু থেকেই অনলাইনে মানুষ ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য সার্ভারে ঢুকতে পারছিল না। পরে অবশ্য এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। এরপরও নানা ভোগান্তি রয়েই গেছে, যার একটির শিকার হন রনি।