বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজীপুরে মরণফাঁদ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং

  •    
  • ৩০ জুলাই, ২০২২ ২০:৪১

জেলার কয়েকটি লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যান জানান, এক সিগন্যাল থেকে ট্রেন পার হলে মোবাইলে পরের সিগন্যালে জানিয়ে দেয়া হয় ট্রেন আসার খবর। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ট্রেন আসার আগাম কোনো তথ্য পান না তারা। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যু।

নারায়ণগঞ্জ ছাড়া রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগের একমাত্র পথ গাজীপুর। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন ৬৬ জোড়া বা ১৩২টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। অথচ এই জেলার অধিকাংশ লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে নেই গেট ও গেটম্যান। কোথাও আবার গেট ব্যারিয়ার ভাঙা। অকেজো সিগন্যাল বাতি, কাজ করে না কলিংবেল।

এমন অবস্থায় চলতি বছরে জেলার লেভেল ক্রসিংসহ রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক।

সর্বশেষ গত ২৪ জুলাই ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কের শ্রীপুরের মাইজপাড়া এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিক বহনকারী একটি বাসকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বলাকা কমিউটার ধাক্কা দিলে চারজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ১০ জন।

ঘটনার পর কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে গেট কিপার আল-আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

জেলার কয়েকটি লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যান জানান, এক সিগন্যাল থেকে ট্রেন পার হলে মোবাইলে পরের সিগন্যালে জানিয়ে দেয়া হয় ট্রেন আসার খবর। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ট্রেন আসার আগাম কোনো তথ্য পান না তারা। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যু।

গাজীপুরে একটি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং পার হচ্ছেন লোকজন। ছবি: নিউজবাংলা

সরেজমিন দেখা যায়, ব্যস্ততম টঙ্গীর বউবাজার লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ও যান চলাচল করছে। অথচ সেখানে নেই গেট কিংবা গেটম্যান। পাশ থেকে মাটি ও পাথর সরে যাওয়ায় রেললাইন কিছুটা উঁচু হয়ে পড়েছে। ফলে ক্রসিং পারাপারের সময় প্রায়ই রেলপথে আটকে পড়ে ছোট-বড় যানবাহন।

স্থানীয়রা বলছেন, আটকে পড়া এসব যানবাহন সরাতে না সরাতে অনেক সময় চলে আসে ট্রেন, ঘটে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককেই।

একই অবস্থা শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া লেভেল ক্রসিংয়ে। সেখানে ক্রসিংয়ের পাশেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ওই ক্রসিং দিয়ে যাতায়াত করেন। ব্যস্ত জনপদ আর স্কুলঘেঁষা এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

রেলওয়ের তথ্য বলছে, জয়দেবপুর থেকে যমুনা সেতুর পূর্ব পর্যন্ত ৭২টি ও টঙ্গী থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত ৯৯টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যাই বেশি।

টঙ্গী-নরসিংদী-শ্রীপুর রুটে রাজস্ব খাতে পরিচালিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে ৯টি। আর প্রকল্পের আওতায় রয়েছে মোট ২১টি লেভেল ক্রসিং।

স্থানীয়রা বলছেন, অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়লেও তা প্রতিরোধে নেই শক্ত কোনো পদক্ষেপ। দ্রুত এসব ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিংয়ে বেরিয়ার ও গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানান এলাকাবাসী।

অবশ্য অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিংগুলোতে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের দাবি, এক সাইনবোর্ডেই সব দুর্ঘটনার দায় সারছে রেলওয়ে।

তারা জনসাধারণকে নিজ দায়িত্বে, দেখেশুনে সাবধানে চলাচল করতে অনুরোধ জানাচ্ছেন।

জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) শহিদুল্লাহ হিরো বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত জয়দেবপুরের ধীরাশ্রম রেলস্টেশন থেকে শ্রীপুর ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের আগ পর্যন্ত ট্রেন দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত হয়েছেন।’

টঙ্গী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) নুর মোহাম্মদ খান জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শুধু টঙ্গী এলাকায় রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪ জন।

রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘যেকোনো লেভেল ক্রসিং পারাপারের সময় সাইনবোর্ড দেখে এবং দুই দিকে তাকিয়ে সতর্কভাবে রেললাইন পারাপার করতে হবে, তবেই দুর্ঘটনা কমবে।’

তিনি বলেন, ‘বড় সমস্যা হচ্ছে, এলাকাভিত্তিক যে যার মতো রেললাইনে মাটি ফেলে ভরাট করে রাস্তা করে ফেলছে। একসময় সে রাস্তা ঢালাই দিয়ে পাকা করে ফেলে। আমরা এসব অননুমোদিত লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে দিয়ে এলেও পরে তা আবার খুলে ফেলে স্থানীয়রা। চাইলেও এসব ক্রসিং বন্ধ করতে পারছি না।’

অননুমোদিত ও অরক্ষিত এসব লেভেল ক্রসিংয়ের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান রেলওয়ের এই কর্মকর্তা।

এ বিভাগের আরো খবর