ক্যাম্পাসে রাত-দিন শিক্ষার্থীদের অবাধ বিচরণ দেখে লজ্জিত বোধ করেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
খুন হওয়া শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের মাগফিরাতের জন্য আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে এমন মনোভাব প্রকাশ করেন উপাচার্য। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ওই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে লোকপ্রশাসন বিভাগ। বুলবুল এই বিভাগেরই শিক্ষার্থী ছিলেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মধ্যে অনন্য উচ্চতায় আছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষা, গবেষণা, সুশাসন, অবকাঠামো উন্নয়ন সবদিকেই অন্যরা আমাদের অনুসরণ করে। তবে আমরা দেখছি, ইদানীং আমাদের ক্যাম্পাসে কোনো শৃঙ্খলা নেই। রাতে-দিনে যে যেভাবে পারে- সেভাবে অবাধ বিচরণ করছে; যা দেখলে আমরা নিজেরাও লজ্জিত বোধ করি।’
তিনি বলেন, ‘অবাধ বিচরণ করলে নিজেদের নিরাপত্তা কতটুকু থাকবে, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। তাই এই জায়গাটিকে ঠিক করতে পারলে এ বিশ্ববিদ্যালয় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে করজোড়ে মিনতি করেন উপাচার্য।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সব নিরাপত্তা দিতে পারব। তবে শিক্ষার্থীরা নিজে থেকে সচেতন না থাকলে এই নিরাপত্তা কোনো কাজে আসবে না। ক্যাম্পাসে বহিরাগতের আনাগোনা বেশি, তাই বিপদ হবে জেনেও যদি রাত-বিরাতে অবাধ বিচরণ করি, সচেতন না থাকি, সে ক্ষেত্রে আমরা হাজার চেষ্টা করেও নিরাপত্তা দিতে পারব না।’
এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন ও সুশৃঙ্খল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, অনুশাসন মেনে চলার আহ্বান জানান অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় নতুন বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে উপাচার্য জানান, প্রায় ৩০ বছর পর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানাপ্রাচীর দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করে বিভিন্ন স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এ সময় বুলবুলের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থী বুলবুলের অকালমৃত্যুতে আমরা ব্যথিত এবং গভীরভাবে শোকাহত। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের অকালে আর হারাতে চাই না। আমরা চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বুলবুলের পরিবারকে সহযোগিতা করতে। আমরা সব সময় তার পরিবারের পাশে আছি।’
প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় এক ছাত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীকালুর টিলায় ঘুরতে যান বুলবুল আহমেদ। সেখানে ছুরিকাঘাতে আহত হন তিনি। পরে শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বুলবুল হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় বুলবুলকে হত্যা করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের মধ্যে কামরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হাসান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতে জবানবন্দি দেন। এর আগের সন্ধ্যায় জবানবন্দি দেন অন্য আসামি আবুল হোসেন।