‘বড় বিপদে আছি বাপু, দেড়কানি জমিনে পাট বুনছি, পানি নাই, পাট জাগ দিতে পারতাছি না। সব পাট হুগনায় পইড়া গেছে।’
এভাবেই নিজের আশঙ্কা নিয়ে বলছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর গ্রামের পাটচাষি আবু বকর কাজী। অন্য কৃষকদের মতো তিনিও চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। তবে সময়মতো পানি না আসায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ তার কপালে। শুধু আবু বকর কাজীই নয়, মাদারীপুরের এমন হাজারো পাটচাষির দুর্ভোগের এখন কমতি নেই।
মাঠে-ঘাটে পানি নেই। চাষিদের শঙ্কা, সময়মতো পাট কেটে পচাতে না পারলে পাটের রং সুন্দর হবে না, সোনালি আঁশ হবে না সোনালি রঙের। এতে ন্যায্য মূল্যও পাবেন না তারা। সারা বছরের পরিশ্রমই যাবে বিফলে। তাই চরম বিপাকে পড়েছেন পাটচাষিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাট পচানো নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন সদর উপজেলার ছিলারচর, কালিকাপুর, পাঁচখোলা, কুনিয়া, কেন্দুয়া, ঝাউদি, রাজৈর উপজেলার বদরপাশা, পাইকপাড়া, ইশিবপুর, দ্বারাদিয়া, কালকিনি উপজেলার এনায়েনতনগর, পূর্ব এনায়েতনগর, সাহেবরামপুর, সিড়ি খান ও শিবচর উপজেলার সন্নাসীরচর, কাঠালবাড়ী, ভান্ডারীকান্দি, উমেদপুর, পাচ্চরসহ অন্তত ৪০টি ইউনিয়নের পাটচাষিরা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর গ্রামের মাঠে-ঘাটে, খালে-বিলে তেমন পানি নেই। কোথাও পুরোপুরি শুকনো অবস্থায় চাষিদের পাট কাটতে হচ্ছে। মাথায় করে সে পাট পচানোর জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে পারিবারিক পুকুরে, যেখানে গ্রামের মানুষেরা গোসল করে থাকেন। এতে দূষিত হচ্ছে পুকুরের পানি। পুকুরের ওই দূষিত পানি দিয়ে গোসল এবং রান্না করায় নানা পানিবাহিত রোগেরও আশঙ্কা আছে।
পাটচাষি চান্দু সরদার বলেন, ‘এ বছর অনেকগুলো পাট বুনছিলাম। পানির অভাবে এখন হেই পাট জাগ দিতে পারতাছি না। কষ্ট কইরা চকের থেকে মাথায় কইরা বাইত্যে পাট আনতেছি। এবার পাট চাষে আমাদের ধস নামবে। এমন পরিস্থিতি হইলে আর পাট চাষ করব না। আমাদের মাথায় হাত।’
আরেক পাটচাষি শাহাবুদ্দিন বেপারী বলেন, ‘এ বছর পাট নিয়ে বড় বিপদে আছি। আমার অল্প কিছু পাট, হেইডাও জাগ দিতে পারতেছি না। ৮ থেকে ১০ দিন ধইরা পুকুরে ফালাই রাখছি। প্রচুর রোদ থাকায় পাট গাছ শুকাইয়া যাচ্ছে। পানি নাই, কীভাবে জাগ দিব। এর থেকে রক্ষার মালিক একজনই। তিনি আমাদের মাবুদ। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। কৃষি অফিসের লোকদের তেমন কিছু করার নাই। তারাও তো পানি আনতে পারবে না।’
এ বিষয়ে মাদারীপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এ বছর মাদারীপুর জেলায় ৩৫ হাজার ২০৬ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির পাট চাষাবাদ করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ পাট কাটাও হয়েছে। তবে প্রায় চাষিদের পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে তাদের চলতে হবে। এ অবস্থায় নতুন কোনো প্রযুক্তিও তাদের দেয়া সম্ভব না।’