চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমানবাজারে আরঅ্যান্ডজে প্রাইভেট কেয়ার নামে কোচিং সেন্টারটির পরিচালকদের একজন জিয়াউল হক সজিব। মাস তিনেক আগে মায়ের সোনার গয়না বিক্রি করে এটি শুরু করেন তিনি।
ছুটি কাটাতে শুক্রবার ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে যান তিনি। সেখান থেকে মায়ের কাছে আর ফেরা হলো না সজিবের। মাইক্রোবাসটিতে ট্রেনের ধাক্কায় নিহতদের মধ্যে আছেন তিনিও।
হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের যুগিরহাট এলাকায় সজিবের বাড়ি। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে পাগলপ্রায় শাহনাজ আক্তার। স্বজন-পরিচিতজনরা জড়ো হয়েছেন তাকে সান্ত্বনা দিতে।
বিলাপ করতে করতে শাহনাজ বলেন, ‘আমার ছেলেকে গলার আর কানের সোনা বন্ধক দিয়ে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। লালিয়ারহাট একটা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে দিয়েছি ৫০ হাজার। আমাকে বলেছে টাকা আসতে দেরি হচ্ছে, লোন নিয়ে দেন। আমি কী করব, ব্যাংকে আগে থেকেই ছিলাম, লোন নিয়ে দিয়েছি।
‘আমি খবর পেয়েছি দেড়টা-দুইটার দিকে। আমার জা বলছে গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করেছে, একটু খবর নেন। আমি ছাদে ছিলাম। কীভাবে নেমেছি জানি না। আমার কাঁপুনি শুরু হয়েছে। তখন কল দিচ্ছিলাম তাদের, কল যাচ্ছে না। পরে একটা পুলিশ ফোন করেছে।’
আর্তনাদ করে শাহনাজ বলতে থাকেন, ‘ওরে পুত, কেন গেলি? ১০ মিনিট ট্রেন অপেক্ষা করলে কিচ্ছু হতো না। ট্রেনের ট্রাফিক ছিল না, নামাজ পড়তে গেছিল। রেললাইনে কী গাড়ি বন্ধ থাকে?
‘... ওরে পুত কেন গেলি, কেন গেলি?’
মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় শুক্রবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারান মাইক্রোবাসের চালকসহ ১১ আরোহী।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেখানে রাস্তায় ক্রসিংয়ে সাদ্দাম নামের একজন গেটকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি দাবি করেছেন যে সময়মতোই ক্রসিং বার ফেলেছিলেন। তার কথা অমান্য করে মাইক্রোবাসের চালক বারটি তুলে রেললাইনে গাড়ি তুলে দেয়। এতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গেটকিপার সাদ্দামকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন।
তবে দুর্ঘটনায় আহত হাটহাজারীর কলেজছাত্র জুনায়েদ কায়সার ইমনের দাবি, ক্রসিংয়ে কোনো বার ছিল না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ট্রেনের কোনো ব্যারিকেড ছিল না, বাঁশটা ছিল না। ট্রেন যখন আসছিল তখন বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে ট্রেন আসছে। ড্রাইভার গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন এসে মেরে দিয়েছে। খেয়ালও করিনি। নিমিষেই ট্রেন চলে আসছে। আমি পড়ে গেছি পেছনে। কীভাবে পড়লাম, কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।
‘আমার দুই বন্ধু ও দুই বড় ভাই ছিলেন গাড়িতে। চারজন স্যার ছিলেন। বাকিরা আমার ছোট ভাই। আমি নিজেও কয়েকজনকে উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে দিয়েছি।’
জুনায়েদ জানান, যারা নিহত হয়েছেন তারা মাইক্রোবাসের সামনে ও মাঝের দিকে বসা ছিলেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবির বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, ‘ট্রেনের কোনো সিগন্যাল ছিল না বা কেউ সতর্ক করার জন্য কিছু বলেনি। ড্রাইভার গিয়ে বাঁশ সরিয়েছে বলে বলা হচ্ছে- এটাও ঠিক না।’