যাচাই-বাছাই ছাড়াই বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিলেন খোদ আহ্বায়ক।
নিজ আইডি থেকে ফেসবুক লাইভে এসে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন (বাক্যরীতি অপরিবর্তিত), ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পেশ করা বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সুপারিশে যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।’
তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কোনো শীর্ষ নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও সাড়া দেননি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস পাঠানো হলেও জবাব দেননি তারা।
বুধবার বিকেলে ফেসবুক লাইভে এসে ওই মন্তব্য করেন রইজ আহম্মেদ মান্না।
২৩ জুলাই রাতে ৩২ সদস্যের বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য। অভিযোগ ওঠে, কমিটির আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না দুই সন্তানের জনক, অছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের নেতা। তার সতীর্থ যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনুল হাসান ও আরিফুর রহমান শাকিলও বিবাহিত। এ নিয়ে ‘বরিশাল ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা মান্নার সন্তানের বয়স ১০, দুই সারথীও বিবাহিত’ শিরোনামে সংবাদও প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
এই কমিটি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই লাইভে এসে বিষয়টি স্বীকার করে নিলেন মান্না।
১৫ মিনিটের লাইভে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘করোনা টিকা কার্যক্রমে আমাদের নেতা মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে মহানগর ও জেলা ছাত্রলীগ নিরলস পরিশ্রম করেছে। এ ছাড়া করোনার যে সময়ে মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পেত, সেই সময়ে আমাদের নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে আমরা ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছ দিয়েছি।
বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না (মাঝে) এবং দুই যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম (বাঁয়ে) ও আরিফুর রহমান শাকিল। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
‘এই কমিটিতে আমরা যারা রয়েছি তারা সবাই আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। এই আওয়ামী লীগ পরিবারের মধ্য থেকে আমাদের নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ভাই ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য দাদার কাছে যে কমিটি পেশ করেছেন, চাচা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সুপারিশ নিয়ে, তারা কোনো যাচাই-বাছাই না করেই ত্যাগীদের দিয়ে কমিটি করেছে।’
লাইভে মান্না যারা বিভিন্ন ইউনিটের পদপ্রত্যাশী তাদের সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর স্মরণাপন্ন হওয়ার কথা জানান। এ ছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের কমিটিতে যারা পদ পেয়েছেন তাদের সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসন ও সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ফেসবুক লাইভের বিষয়ে জানতে রইজ আহম্মেদ মান্নাকে একাধিকবার কল করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি। পরিচয় জানিয়ে এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি তিনি।
বিতর্কিত কমিটি বাতিলে আন্দোলন
মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন পদবঞ্চিতরা। বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ শামীমের অনুসারী এই ছাত্রলীগ কর্মীরা বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু উদ্যানসংলগ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন।
এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান মিরাজ বলেন, ‘বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটা নীতিবহির্ভূত। ছাত্রলীগের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করা হয়েছে এই কমিটি ঘোষণা করে। বিবাহিত, দুই সন্তানের জনক দিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
‘এ ছাড়া কারও ছাত্রত্বও নেই। এই কমিটির এক সদস্য প্রায় ১৪টি মামলার আসামি। আমরা চাই এই কমিটি অবিলম্বে স্থগিত করা হোক। তা না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন তাহসিন ইসলাম, হাসিবুর রহমান, আমির হামজা, রায়হান হোসেনসহ আরও অনেকে। পরে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে তারা গণস্বাক্ষর করেন।
এ সময় রইজ আহম্মেদ মান্নার অনুসারীদের সেখানে মহাড়া দিতে দেখা যায়।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে মেয়রের বারণ
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে নবগঠিত মহানগর ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার আগে সোমবার দুপুরে নিজের ফেসবুক থেকে লাইভ আসেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
লাইভে তিনি বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে এরা সম্মেলন করবে। এই কমিটি নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন আছে আমি জানি। অনেক সাংবাদিকরা ফোন দিয়েছিল, আমি কারও সঙ্গে কথা বলিনি এবং ওদেরও (সদ্য ঘোষিত কমিটির নেতাদের) বলে দিয়েছি কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার দরকার নেই।’