টাকা কেটে নিয়েও ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় কমলাপুর রেলস্টেশনে আন্দোলন করা মহিউদ্দিন রনির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সহজ ডটকম-ভিনসেন জেভি। সেই সঙ্গে ট্রেনের টিকিটে কোনো ধরনের অনিয়মও হয়নি দাবি করে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে সহজ-জেভি।
সোমবার পাঠানো ওই বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছে ট্রেনের টিকিট বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি।
মহিউদ্দিন রনি বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গত এপ্রিলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেছিলেন। রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ৬ দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে আন্দোলন করছেন তিনি।
রনির অভিযোগে যা ছিল
রনি অভিযোগ করেন, গত ১৩ জুনের রেলের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন বুক করার চেষ্টা করেন তিনি। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে তার পিন কোড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয় টিকিটের। কিন্তু তিনি কোনো আসন পাননি। এমনকি টাকা নেয়ার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্টও পাননি বলে দাবি করেন।
সেদিন তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের সার্ভার কক্ষে অভিযোগ জানালে ‘সিস্টেম ফেইল’ করার কথা বলা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে টাকা রিফান্ড না পেলে আবার যেতে বলা হয়।
রনির অভিযোগ, ওই মুহূর্তে ওই কক্ষে থাকা কম্পিউটার অপারেটর ৬৮০ টাকার আসন ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেন।
সহজের ব্যাখ্যা
রনির অভিযোগ নিয়ে সহজ ডটকম ও ভিনসেন জেভি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, মহিউদ্দিন হাওলাদার রনি গত ১৩ জুন সকাল ৮টা ৩৬ মিনিটে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেট পোর্টাল থেকে ঢাকা থেকে রাজশাহীর চারটি টিকেট কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেন। ওই সময় তার এমএফএস অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে তার মোবাইল ওয়ালেটে তিন হাজার টাকা জমা করেন রনি। ৯টা ৩৭ মিনিটে টিকেটের ২ হাজার ৬৮০ টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু রেলের নিয়ম অনুযায়ী, টিকিট বুকিংয়ের ১৫ মিনিটের মধ্যে তার মূল্য পরিশোধ করতে না পারলে বুকিং বাতিল হয়ে যায়। সেটি তার ক্ষেত্রেও হয়।
সহজ জানায়, তাদের ডিজিটাল রেকর্ড অনুযায়ী সেই তারিখে ওই গ্রাহকের নামে কোনো টিকেট ইস্যুই হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী ই-টিকেট পোর্টালের সব শর্ত মেনে নিয়েই মহিউদ্দিন রনির টিকেট কেনার কথা থাকলেও তা পূরণ করতে ব্যর্থ হন রনি। সহজ-জেভি টাকা না পাওয়ায় টিকেট ইস্যু হয়নি, রনির মোবাইল ওয়ালেটে টাকা ফ্রিজ হয়ে ছিল।
যেহেতু গ্রাহকের টিকেটটি শর্তানুযায়ী সাকসেসফুলি ইস্যু হয়নি তাই তার মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডার পরের ৩ কর্মদিবসের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় রিকনসিলিয়েশন পদ্ধতিতে ‘আনফ্রিজ’ করে গ্রাহককে দিয়ে দেয়া হয়। এটি একটি পরীক্ষিত, নিরাপদ ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত রিকনসিলিয়েশন পদ্ধতি। প্রতিষ্ঠানভেদে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রিকনসিলিয়েশন পদ্ধতিতে পার্থক্য আছে। যেমন- বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে সব ব্যাংক এবং এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ রিকনসিলিয়েশন পদ্ধতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে গ্রাহকদের রিফান্ড করে থাকে।
সহজের দাবি, সেবা দেয়ায় কোন ধরনের অবহেলা ছিল না শর্তে উল্লেখিত সময়ের আগেই টাকা ফেরত পেয়েছিলেন রনি। বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং ওয়েবসাইটের (www.eticket.railway.gov.bd) সব নিয়ম ও শর্তা মেনেই রনিকে সেবা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী (যা টিকেটিং অ্যাপ ও ওয়েবসাইটেও উল্লেখ আছে) ৮ কর্মদিবসের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও দ্রুততম সময়ে সেবা নিশ্চিত করায় রনিকে পরের ৩ কর্মদিবসের মধ্যেই অ্যাকাউন্টে টিকিটের মূল্য বাবদ দেয়া সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেয়া হয়।
রনি দুই মিনিটের মধ্যেই সেবা পেয়েছিলেন বলেও দাবি করেছে সহজ-জেভি। বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট সংক্রান্ত সহায়তা মেইলে (support@eticket.railway.gov.bd) রনি যোগাযোগ করলে (১৩ জুন, সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে) তাকে দুই মিনিটের ভেতর প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে রিপ্লাই দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ই-মেইলের কোনো রিপ্লাই দেননি।
গোপন পিন ছাড়া টাকা কাটার অভিযোগ প্রসঙ্গে সহজ ডটকমের দাবি, রনির এ অভিযোগ সঠিক নয়।
সহজের ব্যাখ্যা- তার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের গোপন পিন নম্বর ছাড়াই টাকা কাটা হয়েছে, যা একেবারেই সঠিক নয়। তার মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডার এ বিষয়ে সব তথ্যপ্রমাণ ইতোমধ্যেই তার কাছে উপস্থাপন করেছে।
সহজকে ২ লাখ টাকা জরিমানা কেন ভোক্তা অধিকারের?
গত বুধবার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রেলের টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
সহজের বিরুদ্ধে গ্রাহক অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে এই জরিমানা করা হয়।
রেলের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ছয় দফা দাবিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টানা ১২ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তরে প্রতিকার চেয়ে সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে শুনানি শেষে সহজকে জরিমানা করা হয়।
সহজ-জেভি সোমবার যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে দাবি করা হয় তাদের কোনো অবহেলা ছিল না।
প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহাত আহমেদের কাছে নিউজবাংলা প্রশ্ন করে, যদি সহজের কোনো অবহেলা না থাকে তাহলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আপনাদের জরিমানা করল কেন?
তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্ন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে আপনাদের করা উচিত। তারা কেন জরিমানা করেছেন।’
যদি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গ্রাহক অবহেলার প্রমাণ না পেত, তাহলে জরিমানার রায় তো দিতো না, পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটা অবশ্যই দিত না।’
বুধবার জরিমানার পর ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী ভোক্তার প্রতি সহজ-এর অবহেলা পাওয়া গেছে। সহজের এই অবহেলা প্রমাণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
আইন অনুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ দেয়া হবে অভিযোগকারী রনিকে। অর্থাৎ তিনি পাবেন ৫০ হাজার টাকা।