ফোনালাপে সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরুকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘৪৯২টি উপজেলার সবাই ভালো হবে, সেটা আপনি কীভাবে আশা করেন? উই হ্যাভ অলরেডি ইনস্ট্রাকশন (এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে)। তাকে ওএসডি করে নিয়ে এসে তার বিরুদ্ধে আদালত কী ইনস্ট্রাকশন দেয়, সে ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী অ্যাকশন নেওয়ার জন্য।
‘আমরা বলে দিয়েছি, ইমিডিয়েটলি (জরুরি ভিত্তিতে) ওএসডি করে নিয়ে আসো। যেহেতু বিষয়টি কোর্টে গেছে, কোর্ট থেকে যেভাবে ইনস্ট্রাকশন আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করার জেরে রোববার হাইকোর্টের তোপে পড়েন টেকনাফের ইউএনও কায়সার খসরু। এর এক দিন পর তার ওএসডির কথা জানালেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে খবর প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিকের সঙ্গে ফোনে অশোভন আচরণ করেন ইউএনও কায়সার। খবরটি রোববার আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
সেটি পড়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইউএনওর ভাষা নিয়ে আপত্তি তোলে।
হাইকোর্ট বলে, ‘একজন ইউএনওর ভাষা খুবই আপত্তিকর। এটা দুঃখজনক; এটা গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো রং হেডেড পারসন ছাড়া এ রকম ভাষায় কথা বলতে পারে না।’
আদালত আরও বলে, ‘এটা কোনো ভাষা হতে পারে না; মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছেন।’
মাঠ কর্মকর্তাদের আচরণের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের তাদের সঙ্গে বসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘কালকে আমরা এটা কমিশনার কনফারেন্সে খুব স্ট্রংলি কমিশনারদের বলে দিয়েছি, কমিশনাররা যে জেলাতে যাবেন, সব অফিসারদের সাথে নিয়ে বসবে।
‘চালচলন, আচার-আচরণ, ব্যবহার এটা তো সাংবাদিকের বিষয় না। কারো সাথে আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না। আপনি যত উপরের দিকে থাকবেন, তত মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি যদি বলি আপনি একজন অসভ্য লোক, দ্যাট ইজ এনাফ। এর পরে কি আজেবাজে কথা বলার দরকার আছে? একটা লোককে যদি আমি খারাপ বলতে চাই, এ লেভেলে দিস ওয়ার্ড ইজ এনাফ। তো ওই ল্যাঙ্গুয়েজ কেন ইউজ করতে হবে?’
কী হয়েছিল
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার তার দাপ্তরিক মোবাইল নম্বর থেকে কল করেন সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে। ওই সময় খবর প্রকাশের কারণ জানতে চেয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। রেকর্ড করা ওই অডিও কলটি সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কলে ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই কত বড় সাংবাদিক হইছস? তুই তো টেকনাফের প্রতিনিধি না।’ ওই সময় সাইদুল ফরহাদ নিজেকে জেলা প্রতিনিধি পরিচয় দিলে ইউএনও তাকে বলেন, ‘কিসের জেলা প্রতিনিধি? সেদিন তোর বাবা যিনি আসছিল, যে তোর পরিচয় দিছিল, সেই জন্য তোর ফোন আমি ধরেছিলাম। তুই যা লিখছস, পুরোটাই মিথ্যা।’
সে সময় সাংবাদিক ফরহাদ ইউএনওকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?’ তখন ইউএনও বলেন, ‘তোর সাথে যে আমি কথা বলতেছিলাম, তখনও তো আমি ওই স্পটে ছিলাম ব্যাটা। তুই যে নিউজটা করছস, সেটা মিথ্যা...তুই বলছস যে, ঘর পানিতে ভাসছে। তুই যখন আমাকে ফোন দিয়েছিস, তখনও আমি স্পটে ছিলাম। আমার সিনিয়র স্যার ছিল স্পটে।’
ইউএনওর দুঃখ প্রকাশ
গালাগালির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন টেকনাফের ইউএনও কায়সার খসরু। শুক্রবার বিকেলে শহরের হিলডাউন সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে উভয় পক্ষকে নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।