চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হলে রাত ১০টার মধ্যে প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া একাধিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্র ধরে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় বলে জানা গেছে।
বুধবার নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসাম ভুঁইয়া।
প্রক্টর জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও ছাত্র উপদেষ্টার সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার থেকেই তা কার্যকর হবে।
প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমাদের ট্রেন সাড়ে ৯টায় শহর থেকে আসে। তারা যাতে ১০টায় হলে প্রবেশ করতে পারে, সেই জায়গা থেকে আমরা এই সময় নির্ধারণ করেছি, যেন নিরাপত্তা ঠিক থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশ করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন টহল দিই, তখন অনেককেই রাত ১২-১টা পর্যন্ত বাইরে পাই। এটা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কোনো ছাত্রী যদি বাড়িতে থাকে সে তার বাড়িতে রাত ৮টার পর বের হতে পারবে?’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ছাত্রীরা। তারা এমন সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে সামাজিক মাধ্যমসহ এই প্রতিবেদকের কাছেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফী নিতু বলেন, ‘প্রত্যেকবারই যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই প্রশাসন মেয়েদের হলের সময়সীমার দিকে নজর দেয়। এটা মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে ধরনের সমাধান।’
নিতু আরও বলেন, ‘গতবারও চবি মেডিক্যালে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় সেল সমাধান দিয়েছিল- মেডিক্যালে রাত ৯টার পর মহিলা ডাক্তার থাকবেন না এবং মেয়েরা চিকিৎসা নিতে পারবে না। প্রশাসনের এই আচরণ স্পষ্টতই সেক্সিস্ট আচরণ এবং এই কারণে ভিকটিম ব্লেমিং আরও বেড়ে যায়।’
তিনি দাবি করেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোতে অভিযুক্তকে শাস্তি দেয়ার নজির খুব কম। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই যৌন নিপীড়নের ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব।
হলে ফেরার সময়সীমা নিয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী নওরিন আক্তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে না, কিন্ডারগার্টেনে পড়াশোনা করছি। সকল সমস্যার সমাধান- রাত ১০টার মধ্যে আবাসিক হলে প্রবেশের নির্দেশ! অর্থাৎ হাতে ব্যথা পেলে হাত কেটে ফেলা দেয়াই সমাধান।’
জান্নাত মুমু নামে আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘চবিতে ছাত্রীই ভর্তি করানোর কী দরকার? প্রশাসন আরেকটু চালাক হলে কেবল ছাত্রদের ভর্তি করানোর সিস্টেম চালু করত।’
ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার জন্য প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই দায়ী করে নৃবিজ্ঞান বিভাগে পূর্বাশা আচার্য্য বলেন, ‘এর জন্য ১০টায় হলে ঢোকার নির্দেশ দিয়ে দেবেন, এটা কেমন কথা! নিজেদের ক্যাম্পাস। নিজেদের ক্যাম্পাসে নিজেরাই সেফ না! সেটা কি মেয়েদের দোষ, না আপনাদের?’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী তার হল থেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যেকোনো সময়ই বের হতে বা ঢুকতে পারবে। প্রশাসনের দায়িত্ব শিক্ষার্থীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তা না করে রাত ১০টার মধ্যে মেয়েদের হলে প্রবেশের নির্দেশনাকে আমরা দায়সারা আচরণ বলে মনে করি এবং আমরা তা প্রত্যখ্যান করি।’
তিনি বলেন, নিজের হলের সামনে নারী শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির ঘটনাসহ গত কয়েক দিনে আরও বিভিন্ন ঘটনায় সমাধান হচ্ছে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় আরও বেশি জোর দেয়া। কিন্তু তা না করে উল্টো এমন নিয়ন্ত্রণমূলক নির্দেশনাকে আমরা কোনো সমাধান বলে মনে করি না। এর মাধ্যমে প্রশাসন তার ব্যর্থতার দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা ১০টায় নাকি ১২টায় ঢুকবে সেটা এখন বলার বিষয় না। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’