ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের মৃত্যুর আগে পেট চিড়ে জন্ম নেয়া ফুটফুটে নবজাতককে শতাধিক মানুষ দত্তক নিতে চান বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ এনামুল হক।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নবজাতককে দত্তক নিতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটসহ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) নানা শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ আমার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছেন। সবাই বলেছেন, তারা আদর-যত্নে নবজাতককে বড় করবেন। কোনো দিন অভাব তাকে স্পর্শ করবে না। কিন্তু শিশুটিকে এখনই দত্তক দেয়া ঠিক হবে না।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, শিশুটির ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। সে সম্পূর্ণ সুস্থ হোক। এরপর তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
‘এর আগে শিশুটির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে দিব। যেকোনো ব্যক্তি চাইলে অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে পারবেন। শিশুটির ভবিষ্যৎ মসৃণ করতে, যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব।’
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় শনিবার ট্রাকচাপায় প্রাণ হারান উপজেলার রায়মনি এলাকার ৪২ বছরের জাহাঙ্গীর আলম, তার ৩২ বছর বয়সী স্ত্রী রত্না বেগম ও তাদের ৬ বছর বয়সী মেয়ে সানজিদা আক্তার।
নবজাতকের ডান হাতের দুটি অংশ ভেঙে গেছে। আমাদের হাসপাতালে বাচ্চা জন্ম দেয়া কয়েকজন নারী ভর্তি আছেন। তারাই আগ্রহ করে নবজাতককে দুধ দিচ্ছেন। ফলে নবজাতক সুস্থ আছে। ১০ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।
ঘটনার দিন রাতেই রায়মনি এলাকায় তাদের তিনজনকে দাফন করা হয়। এই এলাকাটি রত্নার শ্বশুরবাড়ি।
ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল আমিন স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতগতির ট্রাকটি ময়মনসিংহের দিকে আসছিল। বেলা সোয়া ৩টার দিকে ত্রিশালের কোর্ট বিল্ডিং এলাকা পর্যন্ত আসতেই সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই দম্পতিসহ তাদের কন্যাশিশুকে চাপা দেয় ট্রাকটি। এতে ঘটনাস্থলেই স্বামী নিহত হন। আর মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেট চিড়ে বেরিয়ে আসে তার গর্ভে থাকা কন্যাশিশু।
এ সময় স্থানীয়রা নিহত দম্পতির আহত সন্তান সানজিদা ও নবজাতকে উদ্ধার করে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার আগেই সানজিদার মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশুটির ডান হাতটি ভেঙে গেলেও বেঁচে যায় সে।
রত্নার মরদেহ সুরতহাল করেছেন ত্রিশাল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেকান্দার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রাকটি ওই নারীর মাথাসহ বুকের পেটের অংশ দিয়ে উঠে যায়। এতে পেটে প্রচণ্ড চাপ লেগে নাভির পাশের অংশের চামড়া ফেটে কন্যাশিশু বেরিয়ে আসে।’
রত্নার প্রসবের সময় দুদিন আগে পার হয়ে যাওয়ার কথা জানান তার শ্বশুর মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু। বলেন, ‘সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণেই তাকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে নিয়ে গিয়েছিল আমার ছেলে। ফেরার পথে তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।’
নবজাতক বর্তমানে ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকায় লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুঞ্জুর রহমান রিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নবজাতকের ডান হাতের দুটি অংশ ভেঙে গেছে। আমাদের হাসপাতালে বাচ্চা জন্ম দেয়া কয়েকজন নারী ভর্তি আছেন। তারাই আগ্রহ করে নবজাতককে দুধ দিচ্ছেন। ফলে নবজাতক সুস্থ আছে। ১০ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।’