বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এমপির পিটুনি: এবার অডিও ক্লিপকেও ভুয়া বলছেন অধ্যক্ষ

  •    
  • ১৭ জুলাই, ২০২২ ২০:০৮

মারধরের অভিযোগ ফের অস্বীকার করে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা হয়েছে। তানোর ও গোদাগাড়ীতে ওমর ফারুক চৌধুরীর যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে মনে হয় এই কাজগুলো করা হয়েছে।’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর মারধরের শিকার হয়েছেন বলে প্রথমে বিভিন্নজনকে ফোন করে জানালেও এখন তিনি বার বারই অস্বীকার করছেন। এমনকি মারধরের কথা স্বীকার করার একটি অডিও ক্লিপ শনিবার প্রকাশ হওয়ার পরও অধ্যক্ষের দাবি অডিওটিও সত্য নয়।

সেই অধ্যক্ষের সঙ্গে তার কলেজে দেখা করেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী। রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজে রোববার দুপুরে অধ্যক্ষের পাশে প্রায় ৩০ মিনিট বসেছিলেন। এ সময় কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদুল হক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

কলেজের অন্যান্য শিক্ষকসহ কলেজ পরিচালনা পরিষদকে ওমর ফারুক বলেন, ‘অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পেজে রোববার দুপুরে অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার লাইভ করা হয়। সাক্ষাৎকারে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা জানিয়েছেন, আসাদুজ্জামান আসাদ যে অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছেন সেটি তার নয়। অডিওটি তার ভয়েস ক্লোন করে বানানো।’

এসময় অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, ‘আসাদ আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তবে তার সঙ্গে মারধর নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তিনি আমার ক্লোন রেকর্ডটি ফেসবুক- ইউটিউবে প্রচার করবেন, এটা কখনো আশা করিনি।

‘এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে করা হয়েছে। তানোর ও গোদাগাড়ীতে ওমর ফারুক চৌধুরীর যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার মনে হয় এই কাজগুলো করা হয়েছে।’

এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, প্রকাশ্যে এমপির বিপক্ষে না গেলেও ওই ঘটনা তদন্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত কমিটির কাছে অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। যদিও তদন্ত কমিটির প্রধান বলছেন, এখনই তিনি এ বিষয়ে মিডিয়ায় কোনো কথা বলবেন না।

রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী গত ৭ জুলাই অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে রাজশাহী নগরীতে নিজ কার্যালয়ে ডেকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বুধবার সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশ হয়। অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে এমপি ফারুক চৌধুরী বেপরোয়া লাথি, কিল-ঘুষি ও হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর উল্লেখ করে এসব সংবাদ প্রকাশ করা হয়। আঘাতে অধ্যক্ষের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হওয়ারও উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকে এ ঘটনা সারাদেশে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এমপি ফারুক চৌধুরী ১৪ জুলাই রাজশাহী নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। অধ্যক্ষ সেলিম রেজাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এমপি বলেন, ‘সেদিন আমি অধ্যক্ষ সেলিমকে মারধর করিনি। শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধক্কি শুরু হলে আমি নিজে গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করি।’

অধ্যক্ষ সেলিম রেজা নিজেও সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেদিন এমপি আমাকে মারধর করেননি। খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেন, আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব খবর ছড়াচ্ছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদ শনিবার রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নানামুখী তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।

আসাদ বলেন, ‘অধ্যক্ষ সেলিম রেজা মারধরের শিকার হয়েছেন এবং সেদিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন।’

তিনি দেউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার সেই কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের শোনান।

আসাদ বলেন, ‘এমপির মারধরের শিকার হয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। শরীরে আঘাতের ক্ষতও দেখিয়েছেন অধ্যক্ষ।’

অডিওতে অধ্যক্ষ বলছেন, ‘সেদিন এমপির অফিসে যাওয়ার জন্য অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল রাজু অন্য অধ্যক্ষদের ডেকেছিলেন।‘

আক্তারুজ্জামান অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করেন, ‘তারপরে আপনি গেলেন?’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘হ্যাঁ, গেলাম। আমি তো এমনি যাই না, ডাকলে যাই। অন্যরা সাতদিনে তিনদিনই দেখা করে। আমি আর চব্বিশনগরের প্রিন্সিপাল হাবিব ভাই না ডাকলে, কোন মিটিং না হলে যাই না। এটাও আবার রাগ। সেদিনও আমি আর হাবিব ভাই একসঙ্গে গেছি। এই দুইটা লোক ছাড়া ভাই সবাই ওর (এমপির) পা চাটা।’

আক্তারুজ্জামান প্রশ্ন করেন, ‘ওখানে যাওয়ার পর?’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘ওখানে যাওয়ার পরে বিড়ইলের মজিবর ছিল। ওই যে স্কুল এমপিওভুক্ত হলো। ওরা ফুল-টুল নিয়ে গেছে। ওখানে সেক্রেটারি রশিদ ভাই (গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ) ছিল। ওরা বেরিয়ে আসলো। আমরা বসে ছিলাম। ৫-৭ মিনিট। তারপরে রশিদ ভাইয়ের সাথে হ্যান্ডশেক হলো। কথাবার্তা হলো। ওটা ওমর প্লাজার পূর্ব পাড়ে।

‘তখন রাজু এসে বলছে- এই, এমপি উঠে যাবে। ঢোকেন, ঢোকেন, ঢোকেন। সব ঢুকে গেলাম। ঢুকতেই প্রথম কথা। আমাকে বলছে- সেলিম, তোমার কলেজে কী হয়েছে? আমি বলছি, কই স্যার? কিছু তো হয়নি। তখনই গালি... তোর অফিসে বসে আমার নামে, রাজুর পরিবার নিয়ে, আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলিস, টিচাররা কথা বলে। তুই আমাকে না বলে, ওই টিচারদের বিচার না করে... এই বলে উঠে এসেই মনে করেন যে কিল, ঘুষি, লাথি।’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘বার বার উঠছে-বসছে, মারছে। হকিস্টিক ডেকে নিয়ে আসছে। পর্দা টেনে দিল। প্রিন্সিপালকে দিয়েই পর্দা টানাইছে। রাজু পর্দা টেনে দিল। দিয়ে বলছে, এই হকিস্টিক নিয়ে আই। শালাকে হকিস্টিক দিয়ে মেরেই ফেলব। শালাকে আজ মেরেই ফেলবো, শালা আমার বিরুদ্ধে কথা বলে।’

এদিকে অডিও কথোপকথনের বিষয়ে কথা বলতে শনিবার অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। দুপুরের পর তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রোববার সকালে একটি অনলাইনে কথা বলে অধ্যক্ষ দাবি করেন- অডিওটি সত্য নয়, বানোয়াট।

তবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘অডিও ক্লিপটি আমার ও সেলিমের মধ্যে ৯ জুলাই টেলিফোনে কথোপকথনের অংশ। হামলার কথা শোনার পর আমি তাকে ফোন করেছিলাম।’

এদিকে মারধরের শিকার হওয়ার কথা প্রথমে নিজেই বিভিন্নজনকে বললেও এখন ভয়ে তিনি উল্টোপথে হাঁটছেন বলে মন্তব্য করেন রাজশাহী জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা।

তিনি বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমিও তার সঙ্গে কথা বলেছি। আমার কাছেও তিনি দাবি করেছিলেন যে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে পিটিয়েছেন। কিন্তু এখন শুনছি তিনি ভিন্ন কথা বলছেন।’ কারণ জানতে চাইলে বাদশা বলেন, ‘ভয়ে। স্থানীয় এমপি। এ কারণেই হয়তো।’

বাদশা বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি বলেছি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আশ্বস্ত করেছেন, তারা যা তথ্য পাচ্ছেন সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দেবেন।’

অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের অভিযোগটি তদন্ত করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সদস্যের একটি কমিটি। ১৪ জুলাই থেকে কমিটির সদস্যরা রাজশাহীতে আছেন।

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, অধ্যক্ষ সেলিম রেজা শুক্রবার সকালে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। রাজশাহী শহরের রায়পাড়া এলাকায় সেলিমের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তদন্ত দল। কমিটির কাছে তিনি স্বীকার করেছেন যে এমপি তাকে লাঞ্ছিত করেছেন।

কমিটির প্রধান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন বলেন, ‘আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ৫০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি। সবশেষ যে অডিওটি প্রকাশ হয়েছে এবং সেখানে যাদের নাম এসেছে তাদের সঙ্গেও কথা বলছি। পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।’

এ বিভাগের আরো খবর