ভোটের মাঠে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে প্রতিপক্ষকে একই অস্ত্র কিংবা রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে রোববার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে তিনি এমন পরামর্শ দেন।
ভোটের মাঠের সহিংসতা নির্বাচন কমিশন বন্ধ করতে পারবে না জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় হচ্ছে রাজনৈতিক দল।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা মাঠে যাবেন; মাঠে খেলবেন। আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না।’
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, ‘মাঠে কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে একটা রাইফেল ও তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’
এনডিএম প্রতিনিধিদলের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাচ্ছি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের দায় আমাদের ওপর চাপাবেন না। আমরা আমাদের নির্বাচনের দায়টা বহন করব।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন বলে জানান সিইসি।
সরকার সহায়তা না করলে নির্বাচনের পরিণতি খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন হাবিবুল আউয়াল।
সিইসির বক্তব্যের পর এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আইনে আমাদের শটগান নিয়ে দাঁড়ানো পারমিট করে না।’
এর আগে সকালে সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, ‘ইতোপূর্বে আমরা বহুবার বলেছি যে, সব রাজনৈতিক দল, বিশেষত প্রধানতম দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেয়া খুবই প্রয়োজন। কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অবশ্যই বাধ্য করতে পারব না, তবে সব দলকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে আমরা বারবার আহ্বান করে যাব। সে প্রচেষ্টা আমার অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকেও আপনাদের মাধ্যমে সব দলকে আহ্বান জানাচ্ছি সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। পক্ষ-প্রতিপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠপর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, কারচুপি, দুর্নীতি, অর্থশক্তির বৈভব, পেশিশক্তির প্রয়োগ ও প্রভাব বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
‘নির্বাচন কমিশন সবার অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। অন্যথায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াস যতই আন্তরিক হোক, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা কাম্য নয়।’
বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষার ওপর জোর দিয়ে সিইসি বলেন, ‘বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। একটি মাত্র দল ৩০০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সাংবিধানিকভাবে কোনো বাধা নেই, তবে ইতিহাস বলে সে ক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথা জাগিয়ে তুলবে। গণতন্ত্র…পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরূহ।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানাবিধ আশা, হতাশা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিতর্কগুলো নিরসন হওয়া প্রয়োজন। ইতোপূর্বে কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকটি উন্মুক্ত সংলাপ করেছি। এতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের সক্ষমতা ও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা নির্দ্বিধায় তা স্বীকার করে নিয়ে কারণগুলো বারবার ব্যাখ্যা করে বলেছি।
‘ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি; কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। ইভিএম ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আরপিও ২৬ অনুযায়ী, কারচুপির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিপালন করা হলে কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এত কিছুর পরও অপপ্রচার সমানে চলছে। ইভিএম সম্পর্কে বিভ্রান্তি, সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন হচ্ছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রতিরোধ কতটা সম্ভব হবে?
‘আমাদের প্রত্যাশা, জাতীয় নেতারা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও মতৈক্য হয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর নিরসন করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অনকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি সৃষ্টি করবেন।’
নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। আজ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ইসির এই সংলাপ চলবে।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় এনডিএমের সঙ্গে সংলাপ দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। আর ৩১ জুলাই বেলা ৩টায় আওয়ামী লীগের মতবিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির এ ধাপের সংলাপ পর্ব।
এর আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি এতে অংশ নেয়।
বিএনপিসহ ১১টি দল ইসির ওই ডাকে সাড়া দেয়নি, তবে আজ থেকে শুরু হওয়া সংলাপে সব দল অংশ নেবে বলে আশা করছে ইসি।